প্রতিদিন প্রতিটি দোকান থেকে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। পাশাপাশি গণপরিবহণ থেকেও তোলা হচ্ছে বিপুল অঙ্কের চাঁদা। অভিযোগ উঠেছে, এ চাঁদার ভাগ পাচ্ছেন কিছু রাজনৈতিক নেতা, থানা পুলিশ ও হকার নেতারা।
চাঁদা উত্তোলন ও বণ্টনে নিয়োজিতদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আমিনবাজার, হেমায়েতপুর, উলাইল, গেন্ডা, সাভার বাজার স্ট্যান্ড, নবীনগর, বাইপাইল, জামগড়া, জিরানিবাজার, বলিভদ্র ও চন্দ্রা এলাকা থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়। এ ক্ষেত্রে সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করা হয়, চাঁদাকে বলা হয় ‘জিপি’। স্থানীয়রা জানান, সড়ক ও ফুটপাত দখল করে বাজার এবং নানা পণ্যের দোকান বসানোর কারণেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বাইপাইল-চন্দ্রা মহাসড়কের বলিভদ্র এলাকায় ফুটপাত দখল করে ৮ শতাধিক অস্থায়ী দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে পথচারীরা মহাসড়ক দিয়ে চলতে বাধ্য হন। এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এ মহাসড়কে। সরেজমিনে বলিভদ্র গিয়ে কথা হয় কয়েকজন দোকানদারের সঙ্গে। তারা জানান, ধামসোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি লতিফ মন্ডলের ছত্রছায়ায় তারা দোকান বসিয়েছেন। এজন্য প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয় তাদের। এ টাকার ভাগ আশুলিয়া থানা পুলিশও পায়।
তবে আওয়ামী লীগ নেতা লতিফ মন্ডল যুগান্তরকে বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। কেউ যদি এসব দোকান উচ্ছেদ করতে আসে, তাহলে আমি তাদের সহযোগিতা করব। অন্যদিকে আশুলিয়া থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, পুলিশ চাঁদার ভাগ পায়, এমন অভিযোগ সত্য নয়।
জানা যায়, সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের উভয় পাশে ৫ শতাধিক অস্থায়ী কাঁচাবাজার, ফলের দোকান, চটপটি দোকানসহ বিভিন্ন ধরনের ভ্রাম্যমাণ দোকান বসানো হয়। এ ছাড়া সাভার নিউমার্কেটের সামনে শতাধিক অস্থায়ী দোকান বসে। সন্ধ্যার পর এসব দোকান থেকে ২৫০-৪০০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এ ছাড়া নবীনগর স্মৃতিসৌধ এলাকায় বসে শতাধিক দোকান। এখান থেকেও একই হারে চাঁদা তোলা হয়। সাভার বিশমাইল থেকে জিরাবো পর্যন্ত ৪ শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশা থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। স্থানীয় একজন রাজনৈতিক নেতা সিএনজি অটো থেকে চাঁদা তোলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় পাশে ৪ শতাধিক দোকান ও অস্থায়ী কাঁচাবাজার বসে। প্রতিটি দোকান থেকে দৈনিক ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। সব দোকানই বসানো হয়েছে মহাসড়ক ও ফুটপাত দখল করে। হেমায়েতপুর-সিংগাইর সড়কে প্রতিদিন ছোট-বড় ৮ থেকে ৯ শতাধিক যানবাহন চলাচল করে। প্রতিটি সিএনজি, ইজিবাইক ও লেগুনা থেকে ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যান থেকে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হেমায়েতপুর মহাসড়কের দুই পাশ ও সিংগাইর সড়কের তিনটি পয়েন্ট থেকে পুলিশের পক্ষে চাঁদা তোলেন জিনদার, বাবু, আবুল কালামসহ কয়েকজন।
বাসযাত্রী আমিনুল ইসলাম বলেন, চাকরির কারণে এ পথে প্রতিদিনই যাতায়াত করতে হয়। প্রতিদিনই যানজট পোহাতে হয়। বাইপাইল থেকে উত্তরা যেতে বাসে সময় লাগে পৌনে এক ঘণ্টার মতো। পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার রজ্জব আলী বলেন, নবীনগর-বাইপাইল সড়ক মাত্র কয়েক কিলোমিটার। অথচ ফুটপাত ও সড়ক দখল করে অস্থায়ী দোকান গড়ে ওঠায় প্রতিদিনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়তে হয়।
এ বিষয়ে সাভার হাইওয়ে থানার ওসি সাজ্জাদ করিম খান যুগান্তরকে বলেন, মহাসড়কে যানজটের প্রধান কারণ ফুটপাত দখল। ফুটপাতে অবৈধ দোকান উচ্ছেদের জন্য অন্তত আটবার অভিযানের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের রোষানলে পড়ে অভিযান বারবার ব্যর্থ হয়েছে।
অফিস : ৪৪-ক, অতিশ দীপঙ্কর রোড, মুগদা, ঢাকা । সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএস ভবন, ১২০/এ মতিঝিল, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭৫৩-৫২৬৩৩৩ ই-মেইল : dainikkalerkhobor5@gmail.com
কারিগরি সহযোগিতায় ফ্লাস টেকনোলজি