মো. সোহেল রানা, মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি, কালের খবর : বার বার পদ্মার ছোঁবলে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে লৌহজংবাসী। মুন্সীগঞ্জ লৌহজং মানচিত্র আঘাত হানছে সর্বনাশা পদ্মা। তবে বহুরূপী পদ্মার ছোঁবল থেকে রক্ষার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এলাকাবাসীর দাবী একমাত্র স্থায়ী বাঁধই এ ভাঙ্গনরোধের মূল সমাধান। তবে প্রশাসন বার বার আশ্বাস দিলেও ভাঙ্গনরোধের কাজ করা হচ্ছে না বলে দাবী স্থানীয়দের। এদিকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এলাকাবাসীদের ভাঙ্গনরোধে কাজ করতে দেখা গিয়েছে। তারা কেউ নিজে এলাকায় শত শত জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গনরোধ করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে প্রবল বাতাসের ফলে পদ্মায় প্রচন্ড ঢেউ বইছে। আর আঁচড়ে পড়ছে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় পদ্মা সংলগ্ন পাড়গুলোতে। অসময়ে পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় হঠাৎ নদী ভাঙন দেখায় হুমকির মুখে পুরো লৌহজং উপজেলাটি। এতে লৌহজংবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। উপজেলার দক্ষিণ হলদিয়া, খড়িয়া, কনকসার, লৌহজং-তেউটিয়া, বেজগাওসহ বিভিন্ন গ্রামগুলো গত বছর বর্ষায় ভেঙ্গেছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে আবারও সে ভাঙ্গন শুরু হয়।
বেজগাঁও বাসিন্দা মো.সেন্টু শেখ জানান, আবারও আমাদের বেজগাঁও এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হয়েছে৷ প্রশাসনের কোন তৎপর না থাকায় আমরা আমাদের স্বার্থে এলাকার স্বার্থে টাকা তুলে বালু দিয়ে ভাঙ্গনরোধের কাজ করছি। তিনি আরও বলেন, ৭০ হাজার টাকা তুলেছি আমরা। সে টাকা দিয়ে বস্তা, বালু ও বাশ কিনে আমরা ভাঙ্গনরোধের কাজ করছি। আর এতটুকু বাঁধে কিছুই হবে না। মো. বাদশা জানান, এ বালু দিয়ে ভাঙ্গনরোধের শেষ হবে না। সরকার যদি আমাদের ভাঙ্গনরোধে স্থানী বাঁধ না নির্মাণ করে দেয়। তাহলে লৌহজংয়ের ভাঙ্গন ঠেকানো যাবে না। স্থায়ী বাঁধ আমাদের ভাঙ্গনের মূল সমাধান। খড়িয়া বাসিন্দা জাকির হোসেন জানান, প্রতি বছর আমাদের এলাকা ভাঙ্গছে। যখন ভাঙ্গে তখন কিছু জিও ব্যাগ ফালানো হয়। তারপর আর কোন খোঁজ নেই। রাহাত হোসেন বলেন, আমরা দুই বার নদী ভাঙ্গনে পড়েছি। আবারও ভাঙ্গনের মুখে। সরকারি যদি আমাদের ভাঙ্গনরোধে স্থানী বাঁধ দিতো তাহলে আমরা আমাদের এ ভিটে মাটিগুলো নিয়ে আঁকড়ে বাঁচতে পারতাম। শামুরবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা শাহিন ফকিরের বাড়িটি অর্ধেক অংশ এখন নদী গর্ভে চলে গেছে। বাকি অর্ধেক বাড়ি রাক্ষুসী পদ্মা গিলতে বসেছে এমনটি আক্ষেপ করেন বলছেন তারা। নদী পাড়ের পাঁচ শতাধিক পরিবার নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে ভাঙন আতংকে। বর্তমানে গাঁওদিয়া থেকে লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের বাঘের বাড়ি পর্যন্ত পদ্মা পাড়ে ঢেউয়ের তোড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এই চার কিলোমিটার ভাঙনের কারণে বিলীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত বসতি বাড়ি, ফসলি জমি, খেলার মাঠ, মসজিদ, মাদরাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নানা স্থাপনা ও বাগান বাড়ি। ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও বেগ ফেলার উদ্যোগ নিলেও তাতে কাজে আসছে না বলে জানান এলাকাবাসী। অনেক যায়গায় জিও বেগ ফেলার পরেও নতুন করে সে সব এলাকা ভাঙনের কবলে পড়েছে। বেজগাওয়ে বিনোদন কেন্দ্র মৃধা বাড়ি এবং শামুরবাড়ী ইউনুছ খান-মাহমুদা খানম মেমোরিয়াল কমপ্লেক্সটি এখন পদ্মা ভাঙনের মুখে। এমনি দৃষ্টিনন্দন বেশ কয়েকটি বাড়ি এখন পদ্মার কঁড়াল গ্রাসের মুখে রয়েছে। ইতিমধ্যেই পদ্মা রিসোর্টটির আংশিক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, পদ্মার ছোঁবলে লৌহজংয়ের অনেক জায়গায় প্রতিবছর কম-বেশি ভাঙ্গে। আর সে লক্ষ্যে লৌহজংয়ে একটি স্থায়ী বাঁধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করে আসছে। চলতি বছরে স্থায়ী বাধের কাজ ধরা হবে কি না জানি না। তিনি আরও বলেন এ বিষয়গুলো পানি উন্নয়ন বোর্ড জানেন।
অফিস : ৪৪-ক, অতিশ দীপঙ্কর রোড, মুগদা, ঢাকা । সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএস ভবন, ১২০/এ মতিঝিল, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭৫৩-৫২৬৩৩৩ ই-মেইল : dainikkalerkhobor5@gmail.com
কারিগরি সহযোগিতায় ফ্লাস টেকনোলজি