শাহজাদপুরে কর্মসৃজন প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা হরিলুট।
নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির অভিযোগ।
নয়ন ইসলাম, শাহজাদপুর ( সিরাজগঞ্জ) কালের খবর : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্য কর্মসৃজন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের ৪০ দিনের কাজে শ্রমিকের তালিকা প্রস্তুতে অনিয়ম, শ্রমিক অনুপস্থিতি, তদারকির অভাব ও হরিলুটের পরিকল্পনায় প্রকল্প ভেস্তে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শ্রমিক তালিকায় ভূয়া নাম, অনুপস্থিত শ্রমিকদের হাজিরা দেখিয়ে কাজ শেষ না করেই শ্রমিকদের মজুরির টাকার বিরাট অংশ সংশ্লিষ্টরা হরিলুট করে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
শাহজাদপুর উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে গৃহীত প্রকল্পে ৪০ দিন কাজ করার কথা থাকলেও বেশিরভাগ প্রকল্পে ২০ থেকে ২৮ দিন কাজ করেই কাগজে কলমে সমাপ্তি দেখানো হয়েছে। সিংহভাগ প্রকল্পেই আংশিক কাজ করে মেয়াদ শেষের আগে ২৮ দিনের মাথায় প্রকল্পগুলোর কাজ স্থগিত করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা।
এছাড়া শ্রমিকের তালিকা প্রস্তুতে সরকারি নিয়ম লঙ্ঘন করে বদলী হিসেবে শিশু শ্রমিক দিয়ে মাটি কাটার কাজ করানো হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে অতিদরিদ্রদের বাস্তবায়নাধীন কর্মসৃজন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে প্রায় অর্ধশত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মোট ৫ হাজার ৫শ ৫৫ জন শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে। সরকারি বিধান অনুযায়ী, ওইসব প্রকল্পের একজন শ্রমিক প্রতিদিন ৩৫ ঘনফুট মাটি কাটার বিনিময়ে ২০০ টাকা হারে মজুরি পাবেন।
বিভিন্ন ইউনিয়নে ওইসব প্রকল্পের খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, পোতাজিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়নের ৫ টি প্রকল্পে ৫১৬ জন লেবারের বিপরীতে কাজ করছেন পোতাজিয়াতে ৬৫ জন, আলোকদিয়ারে ৩৯ জন, মাদলা ৫৮ জন, লাউতারা ৩৮ জন, বড়ালবাড়ি ১৮ জন। অর্থাৎ ৫১৬ জন শ্রমিক কাজ করার থাকলেও সরজমিনে পাওয়া যায় মাত্র ২১৮ জন শ্রমিক। বাকি ২৯৮ জন শ্রমিক কোথায় কাজ করছে তার কোন খবর জানেন না ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বেপারি ও প্রকল্পের পিআইসি।
পোরজনা ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়নে ৬টি প্রকল্পে ৫৯৩ জন লেবারের বিপরীতে কাজ করছেন জামিরতা ৬৬ জন, জিগারবাড়িয়া ৬০ জন, বাচরা ৮৬ জন, বড় মহারাজপুর ৩৬ জন, ছোট মহারাজপুর ৩৮, পোরজনা ৩৪ জন। অর্থাৎ ৫৯৩ জন শ্রমিক কাজ করার থাকলেও সরজমিনে পাওয়া যায় মাত্র ৩২০ জন শ্রমিক।
হাবিবুল্লাহ নগর ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়নে ৩ টি প্রকল্পে ৩১১ জন লেবারের বিপরীতে কাজ করছেন রতনকান্দি দক্ষিণ পাড়া ২৮ জন, নারুয়া ৪৭ জন, ইসলামপুর ডায়া ৫৭ জন। অর্থাৎ ৩১১ জন শ্রমিক কাজ করার থাকলেও সরজমিনে পাওয়া যায় মাত্র ১৩২ জন শ্রমিক।
জালালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়নে ২ টি প্রকল্পে ২৪৭ জন লেবারের বিপরীতে কাজ করছেন জালালপুর ২৬ জন, সৈয়দপুর ১৫ জন। অর্থাৎ ২৪৭ জন শ্রমিক কাজ করার থাকলেও সরজমিনে পাওয়া যায় মাত্র ৪১ জন শ্রমিক।
এভাবেই উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় একই রকম ভয়াবহ চিত্র। সরকারি কোন প্রকার নিয়ম নীতি না মেনে মনগড়া লেবার তালিকা তৈরি করে ভয়াবহ লুটপাটের পায়তারা শুরু করেছেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা। বরাদ্দের তুলনায় একেবারেই সামান্য লেবার দিয়ে কাজ করিয়ে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা। এমনকি নির্ধারিত সময়ের ১০ দিন আগেই কোথাও কোথাও ১৩ দিন আগেই কাজ শেষ করে পুরো বিল হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন শ্রমিকরা। উপজেলার বেশিরভাগ প্রকল্পের নামেমাত্র কাজ করেই বরাদ্দকৃত টাকা সংশ্লিষ্টরা ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব অনিয়মের অভিযোগ সম্পর্কে ইউনিয়নগুলোর চেয়ারম্যানরা জানান, ' তারা এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারবেন না। সবকিছু মেইনটেইন করছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ।
এ বেপারে শাহজাদপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, 'আপনাদের যা ইচ্ছে হয় আপনারা তাই লিখতে পারেন'।
বিষয়টি নিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনঃর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রহিমকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, নির্ধারিত সময়ের আগে কাজ শেষ করার কোন নিয়ম নেই। যদি কোন প্রকল্পে এরকম অনিয়ম হয়ে থাকে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোঃ শামসুজ্জোহা বলেন, যেখানে যে কয়জন শ্রমিক কাজ করছেন সেই তালিকামতই বিল প্রদান করা হবে।সরকারি প্রকল্পে কোন অনিয়ম দূর্নীতি প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।
অফিস : ৪৪-ক, অতিশ দীপঙ্কর রোড, মুগদা, ঢাকা । সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএস ভবন, ১২০/এ মতিঝিল, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭৫৩-৫২৬৩৩৩ ই-মেইল : dainikkalerkhobor5@gmail.com
কারিগরি সহযোগিতায় ফ্লাস টেকনোলজি