প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ১৭, ২০২৪, ১১:২৯ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ৩, ২০২১, ২:১৯ এ.এম
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাব-রেজিস্ট্র্রি অফিসে জাল দলিলের ছড়াছড়ি। কালের খবর
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, কালের খবর :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুহাতা গ্রামের আবদুল রহিম ভূঁইয়া তার ছেলে আব্দুল তুহিনকে ১৩ শতক জমি লিখে দেন। এরমধ্যে রয়েছে ভাদেশ্বরা মৌজার সে.মে. সাবেক ৮ এবং হালে বিএস ৬ দাগে পৈতৃক ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত ৪৪ শতক জমি থেকে ১১ শতক আর সোহাতা মৌজার সাবেক ২২৭ এবং বিএস ২৫৫ দাগের ২ শতক। অভিযোগ উঠেছে, দলিলটি জাল করে ভাদেশ্বরা মৌজায় ১১ শতকের স্থলে ৪৭ শতক লিপিবদ্ধ করা হয়। এতে ৩টি দাগে জমির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৪৯ শতক। অতিরিক্ত ৩৬ শতক জমি ভাদেশ্বরা মৌজার সে.মে. সাবেক ৮৭ এবং হালে বিএস ১৬৮ দাগের। যার মালিক আবদুল রহিম ভূঁইয়ার ভাই মোখলেছুর রহমান ওরফে আব্দুুর বছিম। ২০১৮ সালের ২৫শে অক্টোবর রেজিস্ট্রি অফিসে সম্পাদিত দলিলের (নং-১৪২৪৪) সার্টিফাইড কপি হিসেবে জাল দলিলটি প্রকাশ পায়। যাতে তৎকালীন সাব-রেজিস্ট্রার মো. মোতাহার হোসেন চৌধুরী, নথিরক্ষক এবং নকল নবীশদের সীল-স্বাক্ষর জাল করা হয়।
জাল দলিলের এই সার্টিফাইড কপির ওপর ভিত্তি করে ২০১৯ সালের ১৪ই মে সদর উপজেলা-ভূমি অফিস আব্দুল তুহিনের নামে নামজারি করে। এরপর জাল দলিলে লিপিবদ্ধ ওই ৩৬ শতক জমি আব্দুল তুহিন তার স্ত্রী আফসানা আক্তার বৃষ্টির নামে গত বছরের ২৩শে জুলাই হেবা ঘোষণা দলিল করে দেন। যার দলিল নম্বর ৭৬২৯/২০২০। বৃষ্টির নামেও নামজারি সম্পন্ন করা হয়। তুহিনের নামে করা জাল দলিল এবং পরবর্তীতে তার স্ত্রীর নামে হওয়া দলিল দু’টির লেখক সদর উপজেলার সোহাতা গ্রামের আবুল হাশেম। তার সনদ নম্বর ১৩১। মোখলেছুর রহমান ওরফে আব্দুর বছিম জানান, ভাদেশ্বরা মৌজার সে. মে. সাবেক ৮৭ এবং হালে বিএস ১৬৮ দাগের ৩৬ শতক জমি পিতার উত্তরাধিকার হিসেবে ভাগবণ্টনে পেয়েছেন তিনি। ১৯৬২ সালে পিতা আব্দুল আহাদ ভূঁইয়ার মৃত্যুর পর ওয়ারিশদের মধ্যে ভাগবণ্টনে তিনি ওই জমি পান এবং তার নামে বিএস রেকর্ড হয়। এরপর ১৯৮৬ সাল থেকে জমিটি ভোগ দখল করছেন। ভাইয়ের ছেলে তুহিন জাল দলিলের মাধ্যমে জমিটি কেড়ে নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিক্রি করে দেয়ার মুহূর্তে গত ডিসেম্বর মাসে তিনি এ ঘটনা জানতে পারেন। এরপর দলিল লেখক হাশেমকে ৩ হাজার টাকা দিয়ে জাল দলিলটির একটি ফটোকপি পান। এতে সন্দেহ হলে তিনি সাব-রেজিস্ট্র্রি অফিসে যান সার্টিফাইড কপির জন্য। ১৪ দিন সন্ধান করেও ওই দলিলের কোন হদিস পাননি। সাব-রেজিস্ট্র্রি অফিস থেকে তাকে ২০১৮ সালের ২৫শে অক্টোবর সম্পাদিত ১৩ শতকের হেবা দলিল (নং-১৪২৪৪) সরবরাহ করা হয়। এরপরই জাল দলিলের বিষয়টি ধরা পড়ে। জমিতে অন্যায়ভাবে কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য তিনি গত বছরের ২০শে ডিসেম্বর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৪ ধারা মোতাবেক নিষেধাজ্ঞাদেশ প্রদানের আবেদন করেন। এছাড়া নামজারি রেকর্ড বাতিলেরও আবেদন করেছেন। বছিমের জমি আত্মসাতে তাকে সহায়তা করেন দলিল লেখক আবুল হাশেম। হাশেম প্রায় ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে এই জাল দলিল করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। দলিল লেখক আবুল হাসেম বলেন, দলিল পিউর। জাল কোনো দলিল হয় নাকি। এদিকে জাল দলিল করার ঘটনা ধরা পড়লে গত ৯ই ফেব্রুয়ারি আবুল হাশেমকে দলিল লেখা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন সাব-রেজিস্ট্রার। তবে রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে আইনি কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সাব-রেজিস্ট্রার মোস্তাফিজ আহমেদ বলেন- সপ্তাহ দু’য়েক ধরে হাশেম দলিল লেখা থেকে বিরত রয়েছেন। শোনা কথার ওপরই আমি এ ব্যবস্থা নিয়েছি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি ওপরে অবহিত করবো। আটলা ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন-তারা দলিলটি যাচাই-বাছাই করার জন্য সাব- রেজিস্ট্র্রি অফিসে পাঠিয়েছেন। দলিল জাল প্রমাণ হলে নামজারি বাতিল হবে।
অফিস : ৪৪-ক, অতিশ দীপঙ্কর রোড, মুগদা, ঢাকা । সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএস ভবন, ১২০/এ মতিঝিল, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭৫৩-৫২৬৩৩৩ ই-মেইল : dainikkalerkhobor5@gmail.com
কারিগরি সহযোগিতায় ফ্লাস টেকনোলজি