স্টাফ রিপোর্টার, কালের খবর :
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভালো ফল পেতে বেশ জোরেশোরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এককভাবে চলমান পৌরসভা নির্বাচনে ভালো ফল করলেও তাতে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে চায় না দলটি। আসছে ইউপি ভোটেও যেন পৌরসভা নির্বাচনের চেয়ে ভালো ফল করা যায় সে চেষ্টায় রয়েছে দলটি। এজন্য প্রার্থী মনোনয়নে বেশ কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। এবারের ইউপি নির্বাচনে দুর্নীতিবাজ, বা ইমেজ সংকট রয়েছে-এমন ব্যক্তিদের মনোনয়ন না দিয়ে প্রার্থী হিসেবে ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদেরই খোঁজা হচ্ছে বলে জানা গেছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যেই বলেছেন, পৌরসভা নির্বাচনের পরেই শুরু হবে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। সবাইকে এখন থেকেই সাংগঠনিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। তফসিল ঘোষণা না হলেও তৃণমূলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক পেতে এরই মধ্যে জোরেশোরে মাঠে নেমে পড়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা জানিয়েছেন, মে মাসের মাঝামাঝি দেশজুড়ে বড় পরিসরে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন শুরু হবে। কয়েক ধাপে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচন এবারও দলীয় প্রতীকেই হবে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ ইউপি নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য এরই মধ্যে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে। চলমান পৌরসভা নির্বাচনে নেতাকর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করলেও আগামী ইউপি নির্বাচনের দলীয় প্রার্থী দলটি।
স্থানীয় সরকারের তৃণমূলের এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে গ্রাম-গঞ্জে সম্ভাব্যপ্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোও তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত তাদের নির্বাচনী কৌশল ও প্রার্থী নির্বাচনের বিষয়ে তৎপরতা শুরু করেছে। আওয়ামী লীগে দলীয় প্রতীক পেতে তৃণমূলের প্রার্থীরা এরই মধ্যে উঠান বৈঠক শুরু করেছে। নির্বাচনের ব্যাপারে এলাকাবাসীর মতামত জানতে এসব বৈঠক করছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও দলীয় নেতাদের নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। এছাড়া দলীয় প্রতীক পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্লিন ইমেজের প্রার্থী খুঁজছেন। ‘দুর্নীতিবাজ’ বা ‘ইমেজ সংকট’ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের মনোনয়ন না দিয়ে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য বলেন, চলমান পৌরসভা নির্বাচনে বেশ কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সমস্যাগুলোর মধ্যে যাতে পড়তে না হয়, সেই জন্য ইউপি নির্বাচনে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান। ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। গত নির্বাচনে কেউ নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছে-এমন কাউকে এবারের ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে না। স্থানীয় আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে এবার গুরুত্ব দেয়া হবে। আগে দেখা গেছে, সংসদ সদস্য কিংবা উপজেলা চেয়ারম্যানদের আত্মীয়-স্বজনদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হতো। এবার সেই ধারা আর দেখতে চান না নেত্রী।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। তারই প্রেক্ষিতে আমাদের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো যথাসময়ে হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি চান একটি সুষ্ঠু নির্বাচন।
মসুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মো. এখলাসছুজ্জামান বাবু দলের দুঃসময়ে কর্মী। বৈবরাগীরচর গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবক মরহুম আ. হামিদ, মাতা- শামসুন্নাহার বেগমের চার সন্তানের মধ্যে সবার ছোট মো. এখলাসছুজ্জামান বাবু। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বিএনপি-জামায়াত সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে তার বিশাল ভূমিকা রয়েছে। তৃণমূলের পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে সবার কাছে তার একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। বিগত সময়ে চারদলীয় জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকা প্রশংসনীয় ছিল বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের একাধিক নেতা। এখলাসছুজ্জামান বাবু ছোট বেলা থেকেই অর্থ দিয়ে সমাজের অবহেলিত-গরিব দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। শুধু তাই নয়, এখলাসছুজ্জামান বাবু বিগত ১৯৯৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ভোটার বিহীন নির্বাচনে কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া ইউনিয়নের বৈরাগীচর, চরআলগী, মসূয়া, বেতাল ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোট গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করি। ওই সময় প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করে প্রায় ১৫টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে অগ্নি সংযোগ এবং ব্যালট বক্স ভাংচুর করে অবৈধ নির্বাচনে বাধা দেয়। এরপর ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রফেসর ডাক্তার আব্দুল মান্নান এর বিজয় নিশ্চিত করতে নির্বাচনে সরাসরি ভূমিকা রাখেন এবং বিএনপি জামায়াত জোটের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের সাথে সংঘর্ষ আহত হন। সেই সংঘর্ষের ঘটনায় পরবর্তীতে একাধিক মামলায় গ্রেফতার হন। কটিয়াদী মডেল থানার মামলা নং-২২৯৯, তারিখ- ২৪/১০/২০০১। ওই সময় পার্শ্ববর্তী জেলা নরসিংদীর মনোহরদী ডিগ্রি কলেজে পরীক্ষা দিতে গেলে সেখানকার বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীরা তাকে পরীক্ষা দিতে না দিয়ে মারপিট করে তাড়িয়ে দেয়। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কর্মী এখলাসছুজ্জামান বাবু এবার আসন্ন মসুয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় (নৌকা) মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। তবে দল তাকে মূল্যায়ন না করলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন। এখলাসছুজ্জামান বাবু বলেন, আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে দলের দুঃসময়ে ছিলাম, আছি এবং আগামী দিনগুলোতেও থাকব। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দলের কোন পদ-পদবি বা অন্য কোন সহযোগিতা প্রাপ্ত হয়নি। আমার জানামতে, বর্তমানে ত্যাগী, বঞ্চিত এবং পূর্বের সরকারের আমলে হয়রানি হওয়া নেতাকর্মীদের বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মূল্যায়ন করছে। তাই আমি আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মসূয়া ইউনিয়নের সকল জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের (নৌকা) টিকিটে চেয়ারম্যান হতে চাই। অপরদিকে আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার ১৮নং ছালিয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের (নৌকা) টিকিটে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে চান তাঁতি লীগের আহ্বায়ক এ. এন. এম ওয়ালীউর রহমান মোল্লা। এরইমধ্যে নিজ এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভায় করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন তরুণ এ নেতা। তিনি বলেন, নৌকা প্রতীক নিয়ে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হতে চান। তিনি নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নে সর্বস্তরের মানুষে পাশে সবসময় দাঁড়াবেন। এ. এন. এম ওয়ালীউর রহমান মোল্লা বলেন, নৌকা মনোনয়ন পাই আর না পাই, আমি চেয়ারম্যান হই আর না হই, প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা নিয়ে আমি এই ইউনিয়নের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে সেবা দিয়ে যাব। এই ইউনিয়নের মানুষ যদি আমাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে এই ইউনিয়নের প্রতিটি মানুষ যেন বলতে পারে আমি নিজেই চেয়ারম্যান। এই ইউনিয়ন থেকে মাদক, সন্ত্রাস, রাহাজানি, অবিচার নির্মূল করব। তৃণমূলে জনদরদি ও কর্মী-বান্ধব নেতা হিসেবে পরিচিত মো: রেজাউল করীম সাগর। তার বাড়ি বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার ৭নং ফুলবাড়ি ইউনিয়নে। এবার তিনি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সারিয়াকান্দি উপজেলার ৭নং ফুলবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদে নৌকার সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী। এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে নিজ ইউনিয়নে দিন-রাত অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। এলাকার গরীব-দু:খী মানুষের সেবক হিসেবে ইতিমধ্যে পরিচিতিও লাভ করেছেন মো: রেজাউল করীম সাগর। তারসাথে কথা হলে তিনি জানান, এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শতভাগ তিনি নৌকার মনোনয়ন পাবেন। একইভাবে সারাদেশে আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূলের ত্যাগী-সৎ ও পরীক্ষিত কর্মীরা মাঠ চয়ে বেড়াচ্ছেন নৌকার মনোনয়ন পাওয়া জন্য।
প্রসঙ্গত, আগামী ১১ এপ্রিল প্রথম ধাপে দেশের ৩২৩ ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহে এসব ইউপির তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। গত বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ইসির বৈঠকে সাংবাদিকদের এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংস্থাটির সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার।
অফিস : ৪৪-ক, অতিশ দীপঙ্কর রোড, মুগদা, ঢাকা । সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএস ভবন, ১২০/এ মতিঝিল, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭৫৩-৫২৬৩৩৩ ই-মেইল : dainikkalerkhobor5@gmail.com
কারিগরি সহযোগিতায় ফ্লাস টেকনোলজি