কাতার সরকারের টেলিভিশন আলজাজিরার ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ বহুল বিতর্কিত প্রতিবেদন বা ডকুমেন্টারির মূল টার্গেট গায়ের জোরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে মিথ্যাচারের নির্লজ্জ অসৎ প্রচারণা। সেই সঙ্গে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী প্রধানকেও সমালোচিত করার অপপ্রয়াস। এক বছরের বেশি সময় ধরে শেখ হাসিনার সরকার, সেনাবাহিনী এবং দেশের বিচার বিভাগ থেকে বিভিন্ন মহলের বিরুদ্ধে লন্ডন সদর দফতর পরিচালিত জঘন্য মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও আষাঢ়ে গল্প আর তথাকথিত নির্বাসিতদের উপস্থাপিত ইউটিউব টকশোর চেনা ব্যক্তিদের প্রতিহিংসার বয়ানের সিনেমাটিক কল্পকাহিনিই এসেছে আলজাজিরার প্রতিবেদনে। এত দিন ধরে যা ইউটিউব বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশুমার অপপ্রচার চলছিল তারই ধারাবাহিক অংশে যুক্ত হয়েছে আলজাজিরা। একটি টেলিভিশনের প্রতিবেদন মান কতটা নিম্ন হতে পারে তা উপস্থাপিত চরিত্রগুলো দেখলেই বোঝা যায়। ইউটিউব ফ্রিস্টাইল প্রতিবেদনে সরকার, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি এমনকি চরম ভারতবিদ্বেষী থেকে সাম্প্রদায়িক উসকানি কোনো কিছুই বাদ যায়নি। দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অনেক সংবাদকর্মী গ্রেফতার, নাজেহাল হলেও এসব প্রতিহিংসাপরায়ণের বিকৃত প্রচারণার বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা কখনই গ্রহণ করতে পারেনি। এমনকি আলজাজিরার এমন প্রতিবেদনের শিরোনামের পক্ষে কোনো যুক্তিতথ্য উপস্থাপন করতে না পারলেও প্রতিবেদন নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরকারের পক্ষে প্রত্যাখ্যান-নিন্দা জানালেও মিথ্যা তথ্য খন্ডনের চেষ্টা হয়নি। ঢালাও বিবৃতি হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন মামলা করবেন। অন্যদিকে শোনা যাচ্ছে আলজাজিরার মিথ্যাচারের ডকুমেন্টারি যা তারা অনুসন্ধানী রিপোর্ট বলছে অথচ সেখানে অনুসন্ধানের কোনো নীতি বা তথ্য-যুক্তিই নেই, সেই মিথ্যাচারের আরও কিছু পর্ব প্রচার হবে।
আলজাজিরার মিথ্যাচারের নাটকে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদের অন্যতম একজন বার্গম্যান। ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে জন্ম নেওয়া এ মানুষটি আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি নেওয়া একজন সোশ্যাল অ্যাকটিভিটস এবং সংবাদকর্মী হিসেবে ব্রিটিশ টিভি চ্যানেল ফোরে কাজ করলেও, একসময় ঝুলিতে পুরস্কার তুললেও বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে তার নেতিবাচক কর্মকান্ড, আদালতে হাঙ্গামা ও লেখালেখির কারণে বারবার তিরস্কৃত হয়েছেন। শাস্তি পেয়েছেন। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে তিনি এতটাই অবস্থান নিয়েছিলেন যে তখন থেকেই তাকে জামায়াতের পেইড লবিস্ট হিসেবে পর্যবেক্ষকরা বিবেচনা করেন। তিনি ঢাকায় ঢাকা ট্রিবিউন, ডেইলি স্টার, নিউএইজ এবং নিউজ পোর্টাল বিডি নিউজেও কাজ করেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, বৈবাহিক সূত্রে তিনি বঙ্গবন্ধুর সহচর, সংবিধানপ্রণেতা, আন্তর্জাতিক খ্যাতিমানসম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের জামাতা ও মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার সারা হোসেনের স্বামী হয়েও জাতির আবেগ-অনুভূতির ওপর আঘাত করে ’৭১-এর শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং আদালত দ্বারা শাস্তি পান। একপর্যায়ে ব্রিটেনে চলে গেলেও জামায়াতি সম্পর্কটা তার রয়ে যায়- যার পথ ধরেই এবার আলজাজিরার প্রতিহিংসার কল্পকাহিনির চিত্রনাট্যে চেহারা আবার উন্মোচন হয়েছে।
আরেক চরিত্র তাসনিম খলিল সম্পর্কে জানা যায়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যয়নরত অবস্থায় শিক্ষানবিস হিসেবে ডেইলি স্টারে কাজ শুরু করেন। সেনাবাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে একটি বিতর্কিত প্রতিবেদনের কারণে জরুরি অবস্থার সময় ২০০৭ সালের ১১ মে তাকে যৌথবাহিনী আটক করে। অনেকের জোর তদবিরে ছাড়া পেয়ে সুইডেন চলে যান। তার পিতা কাশেমী একাত্তরে আলবদর ছিলেন। জামায়াতি কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত আলবদর কাশেমীর বাড়িতে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ জামায়াত নেতারা সিলেট গেলে নিয়মিত যেতেন। তাসনিম খলিল রাজনৈতিক আশ্রয়ে সুইডেনে আছেন।
অন্যতম চরিত্র সামি যত মনগড়া কল্পকাহিনি বলেছেন তার গুরুদের নির্দেশনায় আলজাজিরার পেইড এজেন্ট হিসেবে। আসল নাম জুলকার নাইন সেরবান। মাদকাসক্তির কারণে মিলিটারি একাডেমি থেকে বহিষ্কারের পর বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের খাস লোক হন। হাওয়া ভবনে ছিল অবাধ যাতায়াত। কাজ করতেন চ্যানেল ওয়ানে। প্রতারণাসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত তিনি। মোটা অঙ্কের অর্থে আলজাজিরার শেখ হাসিনার সরকারবিরোধী অপপ্রচারের মিশনে এরাই চরিত্র হয়েছেন। আরও চরিত্র সামনে বেরিয়ে আসতে পারে।
মূল টার্গেট যেখানে দেশে-বিদেশে মিথ্যাকে বারবার নানাভাবে গোয়েবলসীয় কায়দায় এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিতর্কিত করাই নয়, সরকারকে বিদায় করা, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন মহলে এমনকি জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করা, সেখানে তারা ব্যর্থ হলেও এমন গভীর ষড়যন্ত্রের কারণে আলজাজিরাকে এ দেশে নিষিদ্ধ কেন করা হবে না সেটিই বুঝতে পারছি না। আর বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্রে যারা জড়িয়েছেন তারা রাষ্ট্রের হাতের নাগালের কতটা বাইরে যে তাদের ধরা যাবে না? এসব বিশাল বাজেটের অনুদানের মনগড়া মতলবি প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচারে যারা অর্থের জোগান দিচ্ছেন তাদের কেন চিহ্নিত ও আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। অর্থদাতাদের অংশটাই গত এক যুগ আওয়ামী লীগ সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক সুবিধা নিলেও চিন্তা-চেতনায় তারা বিএনপি ও জামায়াতপন্থি। বর্ণচোরা বা সুবিধাবাদীর চেহারায় এক যুগ দেশের ব্যাংক-বীমাসহ নানা খাতে ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থ লুট, অর্থ পাচার করে তারা সমাজেও প্রতাপশালী হয়েছেন। লাখ লাখ, হাজার কোটি টাকা লুটেরাদের কেউ কমিটেড আওয়ামী লীগ নয়, এটি সরকার বুঝতেও পারল না। সুযোগ দিল। সরকারের খেয়ে-পরে এক যুগের মাথায় এসে তারা আজ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অর্থ ঢালছে লন্ডন, নিউইয়র্কভিত্তিক নির্বাসিত পোষ্যদের ষড়যন্ত্রে। সবাই অর্থলোভী। তাদের লক্ষ্য দেশের মানুষকে এবং নানা মহলকে অস্থির-অশান্ত কর। শেখ হাসিনার সরকারকে বিদায় কর যেনতেনভাবে। আন্তর্জাতিকভাবে দেশের শাসনব্যবস্থাকে চরম বিতর্কিত কর এবং বিশ্বমোড়লদের হস্তক্ষেপ আনো। এগুলো রাষ্ট্রবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্র নতুন নয়। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরই শুরু হয়েছিল। তার ধারাবাহিকতাই চলছে। গণতান্ত্রিক পথে শেখ হাসিনার সরকারকে সহিংস আন্দোলন, হরতাল, অবরোধের পথে সরাতে গিয়ে এ শক্তি নিজেরা পঙ্গু হয়ে এখন মিথ্যাচারের অপপ্রচারের সেই পুরনো নীলনকশায়ই হাঁটছে, যদিও এসব বিকৃতি দেখতে দেখতে মানুষ ক্লান্তই নয়, চরম ত্যক্ত-বিরক্ত। তবু তারা থেমে নেই। অর্থের জোগান যেখানে মোটা অঙ্কের সেখানে নির্বাসিত পোষ্যরা লন্ডন সদর দফতরের নির্দেশনায় কাজ করে আরাম-আয়েশেই আছে। জামায়াতের শিক্ষিত শ্রেণিটা আছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটাকে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে। আন্তর্জাতিক মহলের দুয়ারে পৌঁছে দিতে। আর এদিকে দেশে এত সুবিধাবাদী হাইব্রিডে ভরে গেছে আওয়ামী লীগ বা অনেকে নিজেদের নিয়ে এতটা আখের গোছাতে ব্যস্ত যে এমন জঘন্য মিথ্যাচারের জবাব দিতেও সময় পাচ্ছেন না। বিগত নির্বাচনে যারা এত পার্টি করেছেন বা মনোনয়নের জন্য যেসব নর-নারী ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হলেও তা কম হতো না। আসলে কমিটমেন্টের অভাব থাকলে যা হয় তাই হয়েছে। শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে চলমান এমন গভীর ষড়যন্ত্র, নোংরা অপপ্রচারের মুখে জানতে ইচ্ছা করে এত আওয়ামী লীগ আজ গেল কোথায়? সবাই নয়, একটি ক্ষুদ্র অংশও যদি তৎপর হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো ওদের ভাসিয়ে দিতে পারে। নীরব কেন?
আলজাজিরার ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামের মিথ্যাচারের বিকৃত প্রতিবেদন নিয়ে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম কী মন্তব্য করেছেন সম্পাদকীয়তে, সাংবাদিক নির্মাতা সৈয়দ বোরহান কবীর কী পোস্টমর্টেম করেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনে, কিংবা দুলাল আহমেদ চৌধুরী চরিত্রগুলোর পরিচয় কীভাবে তুলে ধরেছেন তাও পড়েছেন বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের একাংশ ও সুবিধাভোগীরা এক যুগে খেয়ে-পরে এতটা নাদুসনুদুস যে ষড়যন্ত্রের কালনাগ যখন ফণা তুলছে তারা তখন ভাতঘুম দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটাও ব্যবহার করতে পারছেন না। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার যারা এক যুগ ধরে বড় আওয়ামী লীগ, তাদের তো সাড়াই নেই!
মাহফুজ আনাম নিজের মতামতসহ বিস্তর লিখতে গিয়ে বলেছেন, ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হিসেবে আলজাজিরার এ প্রতিবেদন সর্বোচ্চ মানের বলা যায় না। প্রতিবেদনটির কিছু শক্তিশালী দিক থাকলেও দুর্বলতা রয়েছে বিস্তর। আমি মনে করি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অনুমান ও কটাক্ষ করে দাবি করার চেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ তুলে ধরাটা বেশি জরুরি। প্রতিবেদনটিতে যত জোর দিয়ে দাবি করা হয়েছে তত তথ্য দিয়ে সব বিষয়ের প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।’ তার মানে তথ্য-প্রমাণহীন একটি অর্ধসত্যও নয়, পূর্ণ মিথ্যাচারের চিত্রায়ণ। অতিনিম্নমানের দুর্বলতায় তৈরি। একটি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত টেলিভিশনের দীনতাকেই সামনে এনেছে বলা যায়। কারণ দরিদ্র থেকে তেলের ওপর ধনাঢ্য হওয়া কাতারের সরকারি টেলিভিশন আলজাজিরা আমাদের জাতির রক্তাক্ত মহান মুক্তিযুদ্ধের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের সময় থেকেই সিরিজ প্রতিবেদন করে আসছে। এটা নতুন কিছু নয়। নিজের দেশসহ আরবে বসন্ত বা গণতন্ত্র নেই সেদিক তাদের ক্যামেরার চোখ কখনো পড়েনি। আলজাজিরা বিশ্বসন্ত্রাসী লাদেনকেও নায়কের আসন দিতে চেয়েছিল।
সৈয়দ বোরহান কবীর প্রতিবেদনের প্রতিটি বিষয় যুক্তি-তথ্য দিয়ে খন্ডন করে দেখিয়েছেন, এটা কতটা পূর্ণ অসত্য। শেখ হাসিনার সরকার ছাড়া ’৭৫-পরবর্তী সব শাসক কীভাবে বিদেশি গণমাধ্যমকে নিষিদ্ধ করেছিলেন তার খতিয়ানও দিয়েছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় একজন হারিছকে সাইকোপ্যাথ বলে আবার তার সব কথার ওপর দাঁড় করিয়ে আলজাজিরা তার নাটকের বিশ্বাসযোগ্যতার মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলে থাকতে সেই এরশাদ শাসনামলে মোহাম্মদপুরের এক জনসভার মঞ্চের পেছনে দাঁড়ানো হারিছকে তার দেহরক্ষী বানিয়ে দেয়। আর কোনো দেখা-সাক্ষাতের বা ছবি দিতে পারেনি। প্রতিহিংসায় ইউটিউবে যেমন প্রচারণা চালানো হয়, তেমনি এটি চালানো হয়েছে। এ দেশে সব দলের জনসভায় নেতা-নেত্রীর পেছনে অনেক কর্মী-সমর্থক দাঁড়ান। তখন হারিছ আসামিও ছিল না। আর শেখ হাসিনার কখনো দেহরক্ষীই ছিল না ক্ষমতায় আসার আগে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর সামরিক শাসনকবলিত বাংলাদেশে তাদের পেটোয়া বাহিনীর আক্রমণে, সাম্প্রদায়িক জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রায় সব আদর্শিক ছাত্র সংগঠনও অস্তিত্বের লড়াইয়ে প্রতিরোধে কমবেশি অস্ত্র ব্যবহার করেছে আমরা জানি। সামরিক শাসনামলে বঙ্গবন্ধু ভবনে তার খুনিদের দ্বারা পরিচালিত দলের অস্ত্রবাজরা কীভাবে গুলিবর্ষণ করেছে তাও আমরা ভুলে যাইনি। সেনাশাসক জিয়াউর রহমান থেকে গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামল পর্যন্ত ’৭৫-এর বর্বর হত্যকান্ডের বিচারই বন্ধ রাখা হয়নি। খুনিদের বিদেশের কূটনৈতিক মিশনের চাকরিতে পুরস্কৃত করেই রাখা হয়নি, ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনে ১৫ দিনের সংসদেও আনা হয়েছিল। বিএনপির জন্মের সঙ্গে নিষিদ্ধ জামায়াতসহ সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তির পুনর্বাসনের ঋণ জড়িয়ে আছে। আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি নিয়ে বিএনপির জন্ম হওয়ায় শুরু থেকেই দলে মুক্তিযোদ্ধারা কোণঠাসা। এখনো সেই ধারা বহাল। একাত্তরের পরাজিত শক্তি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সম্পর্কটাই প্রবল।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে জাতির ঐক্যের প্রতীক বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল ছাত্রলীগের ভাঙনের মধ্য দিয়ে। প্রকাশ্যে-গোপনে মুজিব উৎখাতের গভীর ষড়যন্ত্র ছিল ওপেন সিক্রেট। অতি-বাম, অতি-বিপ্লবী, উগ্রপন্থি হঠকারী রাজনৈতিক শক্তি ও গোপন সশস্ত্র নিষিদ্ধ শক্তি তো ছিলই, ষড়যন্ত্র ছড়িয়েছিল চারদিকে। কত অপপ্রচার ছিল, কত মিথ্যাচার-কুৎসা ছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বাসই করতেন না দেশের কেউ তাঁকে হত্যা করতে পারে! একজন উদার গণতন্ত্রী হিসেবে তিনি জাতির পিতার আসন থেকে সবকিছু দেখেছেন। অথচ ১৫ আগস্ট কালরাতে বিশ্বাসঘাতক মোশতাকসহ অনেকে জাতীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে খুনিচক্র দিয়ে যে বর্বর হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিল তার পরিণতি জাতি এখনো ভোগ করছে। মুজিবকন্যার হাত ধরে দেশ হরতাল-অবরোধ মুক্ত হয়েছে। কৃষি থেকে শিল্প কলকারখানার উৎপাদন সরবরাহ বেড়েছে। ব্যাংকের রিজার্ভ বেড়েছে। এত অর্থ পাচার, এত ব্যাংক লুট, এত ঘুষ-দুর্নীতি তবু দেশ অর্থনীতিতে বিস্ময়কর উত্থান ঘটিয়েছে। দুনিয়াজুড়ে তারিফ। শক্তিশালী বিরোধী দল ছাড়া গণমাধ্যমসহ সিভিল সোসাইটির কণ্ঠ দুর্বল যেমন হয় তেমনি ভঙ্গুর হয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। বিরোধী দলই হঠকারিতায় নিজেদের দুর্বল করেছে। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধিতা করে এসেছি। সুশাসন নিশ্চিত চাইছি। ব্যাংক লুটেরা, ঋণখেলাপি, অর্থ পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ, মাদক বাজিকরদের বিচার-শাস্তি চাইছি। দলের বেপরোয়া উন্নাসিকদেরও লাগাম টানতে বলছি। কিন্তু আর কোনো জাতীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বাস্তবায়ন হতে দিতে পারি না। চারদিকে চলমান গভীর ষড়যন্ত্রের খলনায়কদের সফল হতে দিতে পারি না। যত দুর্বল হোক গণতন্ত্রই উত্তম। নির্বাচন অবাধ গ্রহণযোগ্য হোক আগামীতে। কিন্তু ষড়যন্ত্রের পথে শেখ হাসিনার সরকারের বিদায় দেখতে পারি না। জাতির জীবনে সাংবিধানিক সরকারের পতন বা অঘটন অথবা মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতীক শেখ হাসিনাকে ষড়যন্ত্রের কাছে পরাজিত হতে দেখতে পারি না। ষড়যন্ত্রের কাছে সংবিধান ও জনগণের আশা পরাজিত হতে পারে না। সব ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় জনগণকে সুসংহত ঐকবদ্ধ করতে হলে বারবার বলি আওয়ামী লীগকে তার আদর্শিক ধারায় ফিরতে হবে। ১৪ দল ও মহাজোটের ঐক্যকে সুসংগঠিত করতে হবে। শেখ হাসিনার পাশে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদের মতো বর্ষীয়ান সিনিয়র অভিজ্ঞ নেতাদের নিয়ে পুরো পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের বৈঠক জরুরি। ১৪ দল ও মহাজোটকে সক্রিয় করার সময়।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন
অফিস : ৪৪-ক, অতিশ দীপঙ্কর রোড, মুগদা, ঢাকা । সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএস ভবন, ১২০/এ মতিঝিল, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭৫৩-৫২৬৩৩৩ ই-মেইল : dainikkalerkhobor5@gmail.com
কারিগরি সহযোগিতায় ফ্লাস টেকনোলজি