এমন লোমহর্ষক ঘটনাটি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নের হেলাচিয়া গ্রামে। ওই ইউনিয়নের প্রভাবশালী ইউপি সদস্য দরবেশ বেপারীর পুত্র ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী হোসেন উজ্জল।
লোমহর্ষক এই ঘটনার কাহিনী বলতে গিয়ে বার বারই কেঁদে ফেলেন ওই নারী। তার মুখ থেকে বেড়িয়ে আসে তার ওপর নির্যাতনের আরো ভয়াবহ কথা। বলেন, চার বছর ধরে আলী হোসেন উজ্জল আমার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছে। আমার দেহ ভোগ করেই সে ক্ষান্ত হয়নি। আমাকে দিয়ে বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক থেকে লাখ লাখ টাকা ঋণ উঠিয়ে নিয়েছে।
তিনি বলেন, ভয়ভীতি, প্রতারনা আর আমার সাথে যৌন সম্পর্কের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার কথা বলে টানা চার বছর ওর ডাকে আমি সাড়া দিয়ে আসছিলাম। যখন খুশি আমাকের ওর বাড়িতে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করতো। এই ঘটনা আমার স্বামীকে বলে দেবে কিংবা ইন্টারনেটে সব ছেড়ে দেবে এই বলে সব সময় আমাকে ব্লাকমেইল করতো এবং ওর কাছে যেতে বাধ্য করতো। এভাবে দিনের পর দিন মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও ওর রোষানল থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারিনি। সব কিছুই ওকে উজার করে দিয়েছি। এছাড়া ওর ব্যবসার জন্য গ্রামীন ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, আশা অফিস, জাগরনিসহ বিভিন্ন এনজিও থেকে ৮লাখ ২৫ হাজার টাকা আমাকে দিয়ে সে তুলে নেয়। প্রথম প্রথম কিস্তির টাকা পরিশোধ করলেও পরে আর করতো না। গেল এক বছর ধরে সে আর তার বাড়িতে আমাকে ডাকতো না। নিয়ে যেতো মানিকগঞ্জের উত্তর সেওতা এলাকার মনিরা বেগম মনোয়ারার ৪তলা বিশিষ্ট বাসার চিলাকোঠার একটি কক্ষে। এখানে সপ্তাহে ২-৩ দিন আমাকে নিয়ে আসতো। যৌন উত্তেজক ঔষুধ সেবন করে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক চালানোর পর আবার বাড়ি দিয়ে আসতো। বাড়ির মালিক মনোয়ারা বিনিময়ে ১ হাজার করে টাকা নিতো উজ্জলের কাছ থেকে। শুধু উজ্জলই নয় তার বন্ধুদেরও নিয়ে আসতো সেখানে। একেক দিন একেক বন্ধুদের সাথে আমাকে শারীরিক সম্পর্ক করাতে বাধ্য করতো উজ্জল। এমনকি ওর স-মিলের কর্মচারীদের দিয়েও আমাকে শারীরিক সম্পর্ক করাতো। সেই সম্পর্কের ভিডিও করতো সে। এভাবে এক বছর ধরে মানিকগঞ্জের ওই বাসায় ওর কথা মতো আসতাম।
তিনি আরো বলেন, উজ্জল শুধু আমার সাথে সম্পর্ক করে ক্ষুধা মিটতো না। ওর কু-নজর পড়ে আমার স্কুল পড়ুয়া মেয়ের দিকে । মেয়েকে না এনে দিলে কিস্তির টাকা না দেয়ার হুমকি, ইন্টারনেটে ভিডিও ছেড়ে দেয়া এবং স্বামীর কাছে সব কিছু বলে দেবে এমন ভয় দেখাতে থাকে। আমি ওকে বলতাম আমি নিজে মরে যাবো তার পরও আমার মেয়েকে তুলে দিতো পারবো না। তারপরও সে পিছু ছাড়ছিল না। একদিকে কিস্তির টাকার জন্য পাওনাদাররা বাড়ি এসে যা না তাই বলে যাচ্ছে, অন্য দিকে ভিডিও ফুটেজ ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবে আর সব কিছু তার স্বামীকে জানিয়ে দেবে এমন নানা জটিলতার জালে আটকে পড়ে যাই।
কোন উপায়ন্ত না পেয়ে বাধ্য হয়ে গত মঙ্গলবার মনোয়ারার বাসায় মেয়েকে নিয়ে যাই। প্রথমে মেয়েকে নিচে রেখে আমি ৪তলা বাসার চিলাকোঠার একটি কক্ষে যাই । যৌন উত্তেজক ঔষুধ সেবন করে প্রথমে উজ্জল আমার সাথে বেশ কিছুক্ষন শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। এরপর মেয়েকে চিলকোঠায় নিয়ে আসতে বলে। পরে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি টের পেলে উজ্জল তার মোবাইল ফোনটি ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়। মেয়ের সম্মান বাঁচাতে বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার রাতে মানিকগঞ্জ সদর থানায় মামলা করি।
বুধবার মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্য সরকারী হাসপাতালের আমার ডাক্তারী পরিক্ষা করা হয়েছে। ওই পশুর উপযুক্ত শাস্তি না হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ওই নারী।
মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার-ইন-চার্জ রকিবুজ্জামান বলেন,এ ব্যাপারে মো. আলী হোসেন উজ্জল এবং তার এই অপকর্মে সহায়তা করার জন্য ওই বাড়ির মালিক মনিরা বেগম মনোয়ারার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া আসামীদের ধরার চেষ্টাও চলছে। পাশাপাশি উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোন পরীক্ষা করা হচ্ছে।
অফিস : ৪৪-ক, অতিশ দীপঙ্কর রোড, মুগদা, ঢাকা । সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএস ভবন, ১২০/এ মতিঝিল, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭৫৩-৫২৬৩৩৩ ই-মেইল : dainikkalerkhobor5@gmail.com
কারিগরি সহযোগিতায় ফ্লাস টেকনোলজি