নড়াইল প্রতিনিধি,কালের খবর :
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৯৬ তম জন্মবার্ষিকী কাল (১০ আগষ্ট)। ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় পিতা মেছের আলী ও মা মাজু বিবির সংসারে জন্মগ্রহণ করেন । জন্মের সময় তার নাম রাখা হয়েছিলো লালমিয়া। তার পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ সুলতান। নড়াইলের সকলেই তাকে লালমিয়া নামেই ডাকতো ।
সুলতানের শিল্পকর্মের বিষয় ছিলো-কৃষক, জেলে, তাঁতি কামার, কুমার, মাঠ, নদী, হাওর, বাঁওড়, জঙ্গল, সবুজ প্রান্তর তথা খেটে খাওয়া পেশীবহুল মানুষগুলো। প্রকৃতি ছিলো তার চিত্রকর্মের প্রেরনা। শিশুরা যেন প্রকৃতির কাছে থেকে শিখতে পারে সে জন্য সুলতানের স্বপ্ন ছিলো তিনি একটি সুন্দর বজরায় করে শিশুদের নিয়ে নদীতে ভেসে বেড়াবেন আর তারা মনের আনন্দে ছবি আকবে। সুলতানের আশার কথা জানতে পেরে ১৯৯২ সালে জার্মান রাষ্ট্রদুত পিটার জেভিসের আর্থিক সহায়তায় প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হয় একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা। অভাব অনটনের মধ্যে টাকা ধার করে পুরো নৌকাটাই সুলতান তদারকি করে বানিয়েছিলেন ৬০ ফিট লম্বা এবং ১৩ ফিট চওড়া “ভ্রাম্যমান শিশুস্বর্গ” বজরা। নৌকাটির ভিতরে রান্না ও খাবার ব্যবস্থা সহ ভিতরে বসবার জন্য দুইপাশে বেঞ্চ ও বজরার উপরে গ্রীল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। যাতে শিশুরা নিরাপদে প্রকৃতির কাছাকাছি এসে ছবি আকাআকি করতে পারে। জীবিত সুলতান মাত্র অল্প কয়েকদিন শিশুদের নিয়ে চিত্রা নদীতে ভেসে ছবি একে বেড়িয়েছেন ।
আজ সুলতান নেই ,সুলতানের শিশুস্বর্গের বজরা পানিতে ভাসেনা। নানা জনের আশ্বাসের পরেও সংরক্ষনের অভাবে নষ্ট হতে হতে একেবারেই শেষ পর্যায়ে।
সুলতানের মৃত্যুর পর ভ্রাম্যমান শিশুস্বর্গ নৌকা অরক্ষিত হয়ে পড়ে। অবহেলার এক পর্যায়ে বজরাটি চিত্রানদীতে তলিয়ে যায়। সুলতানের ঘাটে একটি ঘর নির্মান করে সেখানে নৌবাহিনীর সহায়তায় বজরাটি উত্তোলন করে রাখা হয়। বর্তমানে বজরাটির বাইরের কাঠ ভেঙ্গে,তলা ফেটে বসে গেছে, বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে,কাঠে ঘুন ধরে খসে পড়ছে, টিকিটিকি আর তেলাপোকার আখড়া বেধেছে মোট কথা একেবারেই ধ্বংসের শেষ প্রান্তে সুলতানের স্বপ্নের ভ্রাম্যমান শিশুস্বর্গটি ।
২০১৩ সালে শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকি নড়াইলে এসে শিল্পী সুলতানের স্বপ্নের কথা ভেবে শিশুদের নিয়ে নৌকায় ঘুরে বেড়ান। স্থানীয়দের প্রশ্নের জবাবে সুলতানের নৌকার আদলে আরেকটি নৌকা তৈরী করে সুলতানের স্বপ্নের শিশুস্বর্গ চিত্রা নদীতে ভাসানের আশ্বাস দেন। ৭ বছর পার হয়ে গেলে ও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
সুলতানের ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ নৌকাটি চিত্রা নদীর পাড়ে যথাযথ ভাবে সংরক্ষণসহ পর্যটক আকর্ষণীয় করতে ২০১৮ সালের জুনে দৃষ্টিনন্দন ‘সুলতান ঘাট’ নির্মাণের কাজ শুরু করে জেলা পরিষদ। কয়েকটি পিলার ঢালাইয়ের মধ্যদিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করা হলেও তা বেশি দুর এগোয়নি। নক্সা পরিবর্তন ও আর্থিক সমস্যায় প্রায় দু’মাস পরেই নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখন নৌকা ও ঘাট দুটোই হুমকীর মুখে। ঘাট সংরক্ষনের পিলারের চারপাশে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। রডগুলো বেরিয়ে আঁকাবাকা হয়ে গেছে। চারিদিকে ঝোপঝাড়ে একাকার হয়ে আছে।
নড়াইল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মলয় কুন্ডু বলেন, সুলতান প্রতৃতি জীবযন্তু আর সাধারন খেটে খাওয়া মানুষের ছবি আকতেন। আমরা নিজেকে সুলতান প্রেমী দাবী করি কিন্তু সুলতানের আদর্শ নিয়ে ভাবি না, তাহলে সুলতানের শিশুস্বর্গ নৌকাটি এভাবে নষ্ট হতো না।
নড়াইল শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার মোঃ হায়দার আলী জানান,২০১৪ সালে শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকি স্যার আমাকে সুলতানের নৌকা এবং ঘাট মেরামতের জন্য নড়াইল থেকে চিঠি দিতে বলেছিলেন, আমি এ কয়েক বছরে অনেক পত্র দিয়েছি, কিন্তু তার কোন প্রতিক্রিয়া পাইনি ।
সুলতানের পালিত কন্যা নিহার বালা বলেন, বাবা বেচে থাকতে নৌকায় ফল নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়েছেন । এখন সুলতান নেই নৌকাটি অবহেলায় নদীতে ডুবে গেল,তারপর ভেঙ্গে পাড়ে পড়ে রয়েছে । সুলতানের ঘাটে নৌকা আছে কিন্তু ঘাটের কি দশা । সুলতান কে ভালোবাসলে শিশুদের ভালোবাসতে হবে । এখন ও আর কেউ শিশুদের ফল খেতে দেয় না । আসলে সুলতান প্রেম সাহেবী ব্যাপার হয়ে গেছে ।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, বড় পরিসরে সুলতান সংগ্রহশালার ঘাট নির্মাণসহ ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গটি মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ কারণে অর্থের পরিমাণও বেড়ে গেছে। ঘাটটিকে দৃষ্টিনন্দন ও বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে প্রায় ২ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এজন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও গণপূর্ত বিভাগে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করছি এই অর্থবছরেই বরাদ্দ পেয়ে যাবো। এরপর কাজ শুরু হবে।
বার্ধক্যজনিত কারণে ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। করোনা সংকটের কারণে এ বছর জন্মদিনে (১০ আগস্ট) বর্ণাঢ্য আয়োজন থাকছে না।
|
অফিস : ৪৪-ক, অতিশ দীপঙ্কর রোড, মুগদা, ঢাকা । সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএস ভবন, ১২০/এ মতিঝিল, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭৫৩-৫২৬৩৩৩ ই-মেইল : dainikkalerkhobor5@gmail.com
কারিগরি সহযোগিতায় ফ্লাস টেকনোলজি