কবে পাবো সেই ঝড়োয়া কি দেখা।
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের খবর :
আজ জাতির কাছে একটা জিনিস জানতে চাই আমরা কি সবাই বাংলাদেশের নাগরিক নাকি অন্য কিছু, না অন্য কোন দেশের নাগরিক আমরা অন্য দেশের নাগরিক যদি হই এরপরেও এ দেশে আছি। আমরাও খাবারের আশা করি খেয়ে বাঁচার অধিকার রাখি, কিন্তু দেখা যাচ্ছে আমার পরিচয় পত্র এখানকার স্থানীয় আছে তো আমি ত্রাণ পাবো নয়তো না। এভাবেই আমার সাথে কথা বলছিলেন শ্রীমঙ্গলের জুয়েলার্স ব্যবসায়ী ও কারিগর উনার মূল কথাগুলো সংক্ষেপে হুবহু তুলে ধরা হলো। উনি এই শ্রীমঙ্গলের ৩ নং ইউনিয়নের ভোটার দেশের বাড়ি টাঙ্গাইল দীর্ঘ ২০ থেকে ২৫ বছর এই শ্রীমঙ্গলে বসবাস করেন উনি আমাকে জানান লোকলজ্জায় কাউকে বলতেও পারছি না সইতেও পারছি না আমি যে এলাকায় থাকি সেখানে ত্রাণ দিতেছে দেখে এসে অনেক কষ্টে চাইতে গেছিলাম বিনিময়ে আমাকে বলা হল আমি ইউনিয়নের ভোটার এখানে দেওয়া যাবে না ইউনিয়ন থেকে নিতে হবে। আমি উনার কথা শুনে উনাকে পাল্টা প্রশ্ন করি ইউনিয়ন থেকে নিলেন না কেন তার প্রতি উত্তরে আমাকে বললেন ভাই আমার জায়গায় যদি আপনি হতেন বুঝতেন কি যন্ত্রণায় আছি চার চারটা বাচ্চা নিয়ে সুখেই চলছিলাম কিন্তু ব্যবসা অর্থাৎ লকডাউন থাকায় দোকানপাট বন্ধ থাকায় আমার এই পরিস্থিতি ৩ নং ইউনিয়নের গ্রামে আমার শ্বশুর বাড়ি এখন আপনি বলেন আমি কিভাবে চাইবো। তখনই আমার ইচ্ছে আর কিছু পারি না পারি ঠিক লিখতে পারবো জাতির কাছে, জাতির বিবেকের কাছে।
এভাবে হাজার হাজার মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত পরিবার অনাহার-অর্ধাহারে হয়তো থাকতে পারে সেই থেকেই এই লেখা, সমাজের জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজ পতিদের কাছে আমার আকুল আবেদন এগিয়ে আসুন।
সম্রাট বাবরের পুত্র হুমায়ুন। নানা বৈচিত্রে ভরপুর তার জীবন। প্রজাদের জন্য খেয়ালী এই রাজা বিশেষ এক ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, যার নাম ‘ঝড়োয়া কি দেখা।
দিল্লী যারা সফর করেছেন, যারা লাল কিল্লাসহ মোগল সম্রাটদের প্রতিষ্ঠিত প্রাসাদ ও দুর্গগুলো দেখেছেন, তাাদের জানা আছে প্রায় প্রতিটি কেল্লার এক পাশে রাজপ্রাসাদের সাথেই আছে খোলা মাঠ বা সড়ক। প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর এই সড়কে প্রবেশের ফটক খুলে দেয়া হতো। সাধারণ প্রজারা প্রবেশ করে চলে যেতো সম্রাটের শোবার ঘরের একেবারে সন্নিকটে। সুর্যোদয়ের সাথে সাথে কেল্লার দোতলায় একটি জানালা খুলে যেত। ঘুম থেকে উঠে সম্রাট এসে দাঁড়াতেন সেই জানালার সামনে। কোন কোন সময় সম্রাটগণ সেই জানালা থেকে প্রজাদের উদ্দেশ্যে ছিটিয়ে দিতেন ফুলের পাঁপড়ি। কখনো বা আশরফি। প্রজারা আশ্বস্ত হতো তাদের সম্রাট জীবিত আছেন, রাজ্য ঠিকমত চলছে। সম্রাটের মুখ দেখার পর প্রজারা চলে যেত নিজ কাজে। সকালে সম্রাট কর্তৃক প্রজাদের দেখা দেয়ার এই ব্যবস্থাটির নাম ‘ঝড়োয়া কি দেখা।
আমরা এখন সেই ‘ঝড়োয়া কি দেখার অপেক্ষায় আছি।
গত আজ প্রায় ১৭ থেকে ১৮ দিন ধরে পুরো দেশ লক ডাউন। পুরো দেশের মানুষ কার্যতঃ গৃহবন্দি। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণী অসহায়। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে এ ক’দিনে। কাজ নেই। আয় নেই। রোজগার নেই। অনেকের ঘরে চাল ডাল নেই। মাত্র কয় দিন পরেই রোজা শুরু হচ্ছে। অনাগত দিনগুলো কেমন যাবে- এ নিয়ে উদ্বেগে মধ্যবিত্ত সহ দরিদ্র মানুষ।
এ অবস্থায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দিকে চোখ সবার। তাদের কাছ থেকে সহায়তা আসছে কি-না, সেদিকেই সবার লক্ষ্য।
সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে এমপি আছেন ১৯ জন। সংরক্ষিত আসনের এমপি রয়েছেন আরো ২ জন। উপজেলা ৩৯ রয়েছে চেয়ারম্যান রয়েছেন পুরো বিভাগের প্রতিটি উপজেলায়। রয়েছেন দুজন করে ভাইস চেয়ারম্যান। ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে ৩৩৬ টি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ার্ম্যান রয়েছেন, মেম্বাররাও রয়েছেন। সিটি কর্পোরেশনে মেয়র রয়েছেন, কাউন্সিলর রয়েছেন। পৌরসভাগুলোতে রয়েছেন পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর। জাতির এ চরম দুঃসময়ে তাদের কে কে মাঠে আছেন বলুন তো?
এই মাঠৈ থাকা মানে সশরীরে হাজির থাকা নয়। সরকার ত্রাণ দিচ্ছে। খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। সেই সাহায্য কি মানুষের কাছে পৌছাচ্ছে? স্থানীয় এমপিরা কি তার খোজ নিচ্ছেন? স্থানীয় এমপিরা নিজ উদ্যোগে এলাকার মানুষের জন্য কোন বিশেষ তহবিল গঠন করেছেন?
দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সকল এলাাকার মানুষের উত্তর হবে- না। মন্ত্রী এমপিদের সাড়া শব্দ নেই। দেকা নেই। সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের এমপিদের মধ্যে একমাত্র সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীকেই এবং মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল- কমলগঞ্জ ৪ আসনের এমপি উপাদক্ষ সাবেক চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ কে দেখা গেছে নিজ উদ্যোগে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নিজ নির্বাচনী এলাকার দরিদ্র মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করতে। এদিকে গত ২৪ মার্চ থেকেই সিলেট ৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী তিনি বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমার প্রতিটি ইউনিয়নের নিজে উপস্থিত থেকে ত্রান বিতরণ করছেন। আর কারো কোন সাড়া শব্দ দেখছিনা। অবশ্য, ইত্যবসরে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়রও নিজ উদ্যোগে নগরীর দরিদ্র মানুষের সহায়তার লক্ষ্যে নগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে সহায়তা সংগ্রহ করে একটি নিজস্ব তহবিল গঠন করেছেন। কাউন্সিলদের মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডে দরিদ্রদের মাঝে খাদ্য সহায়তা বন্টন করা হচ্ছে। যদিও এই বিতরণ কার্যক্রম ইতোমধ্যে জোর জবরদস্তি আর ইচ্ছাধীন বিতরণে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
ভোটের সময় আসলে বসন্তের কোকিলদের আগমণ ঘটে। তারা ভোট চান। সুখে দুখে পাশে থাকার আশ্বাসের বাণী দেন। সেই ভোট প্রাথীদের অনেকেই আবার কোটিপতির উপর বিলিয়ন পতি। সেই পতিদেরও কোন খোজ নেই। যেমন আাওয়ামী লীগ, তেমন বিএনপি। তেমন বাকি দলও। সবাই যে গা ঢাকা দিয়েছেন।
মাননীয় নেতৃবৃন্দ। আপনরারা সাড়া দেন। আমরা দেখি যে, আপনারা জীবিত আছেন। রাজ্য ঠিকমত চলছে। প্রতিদিন সকালে আমরা আপনাদের প্রাসাদের বাইরে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকি। ‘ঝড়োয়া কি দেখা এর অপেক্ষায় থাকি কবে পাবো দেখা।
লেখক, সাংবাদিক সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম হাসান।
অফিস : ৪৪-ক, অতিশ দীপঙ্কর রোড, মুগদা, ঢাকা । সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএস ভবন, ১২০/এ মতিঝিল, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭৫৩-৫২৬৩৩৩ ই-মেইল : dainikkalerkhobor5@gmail.com
কারিগরি সহযোগিতায় ফ্লাস টেকনোলজি