কালের খবর রিপোর্ট :
ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র নাইমুল আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এরপর তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। জামিন আবেদন করলে হাকিম আদালতকে তা বিবেচনা করতে বলেছেন হাইকোর্ট। এজাহারে নাম না থাকা জামিন আবেদনকারী অন্যদের এ মামলায় অভিযোগ গঠন বা অভিযোগ আমলে না নেয়া পর্যন্ত গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করতে বলা হয়েছে। গতকাল বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। হাইকোর্ট যাদের গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করার নির্দেশ দিয়েছেন, তারা হলেন- প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হক, কিশোর আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মহিতুল আলম, প্রথম আলোর হেড অব ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাকটিভেশন কবির বকুল, নির্বাহী শাহ পরাণ তুষার ও নির্বাহী শুভাশীষ প্রামাণিক।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল-ইসলাম এবং তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী সুমাইয়া আজিজ, আফতাফ উদ্দিন সিদ্দিকী, প্রশান্ত কর্মকার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। শুনানিতে ব্যারিস্টার আমীর -উল-ইসলাম আদালতকে বলেন, মামলার এজাহারে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের নাম রয়েছে।
অথচ তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। অনুষ্ঠানটা ছিল কিশোর আলোর। ঘটনা ঘটেছে মঞ্চের পেছনে। আর মঞ্চের পেছনে কারো যাওয়ার কথা না। এরপর নিহতের বাবা ওসিকে একটা চিঠি দিয়ে বলেছিলেন তিনি সন্তানের লাশ নিয়ে যেতে চান, কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু কয়েকদিন পর আদালতে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এটি জামিনযোগ্য ধারা। আমি তাদের জামিন চাই। এরপর অতিরিক্তি অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, নাইমুল আবরার বিদ্যুৎস্পষ্ট হওয়ার পর তাকে কাছের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে না নিয়ে, নেয়া হয়েছে মহাখালীর ইউনিভার্সেল হাসপাতালে। এতে আয়োজকদের অবহেলা ছিল। এছাড়া, ছেলেটি মারা যাওয়ার পরেও আয়োজকরা অনুষ্ঠানটি চালিয়ে গেছেন। এটা পরিকল্পিত গাফিলতি এবং অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড। এমনকি ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দেয়ার জন্য তার বাবাকে চাপ দেয়া হয়েছে এবং অভিযোগকারীকে ভুল বুঝিয়ে লিখিত নেয়া হয়েছে। আগাম জামিন সংক্রান্ত আপিল বিভাগের সর্বশেষ রায়ের নির্দেশনা তুলে ধরে মমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, এই আসামিদের জামিন দেয়া উচিৎ হবে না।
এর আগে ১৯শে জানুয়ারী নিহত নাইমুল আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তারিপরোয়ানা প্রাপ্ত প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হকসহ ছয়জন জামিন আবেদন করেন। হাইকোর্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করার নির্দেশ দেন। পরে ব্যারিস্টার এম আমির-উল-ইসলাম নিম্ন আদালতের নির্দেশনা বেআইনি উল্লেখ করে বলেন, এ ঘটনায় একটা প্রসিকিউসন হয়েছে এবং সেই প্রসিকিউসনে আমরা যে ধরনের ইন্সট্রাকসন (গ্রেপ্তারি পরোয়ানা) পেয়েছি, তাতে এটা আমাদের কাছে ম্যালাফাইডি প্রসিকিউশন বলে মনে হয়েছে। জামিনযোগ্য ধার হওয়া সত্বেও উচ্চ আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন কেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার আমির বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এখানে একটা আইনের ভঙ্গ হয়েছে। নিম্ন আদালত বেআইনিভাবে কাজটা (পরোয়ানা জারি) করে তাদের (ছয়জন) ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করেছেন। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে গ্যারান্টিড রাইটগুলোর মধ্যে হস্তক্ষেপ করেছে এ নির্দেশনা। তাই তারা উচ্চ আদালতে এসেছেন।
এর আগে গত ১৬ই জানুয়ারি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মোহাম্মাদপুর থানা পুলিশ প্রথম আলোর সম্পাদকসহ ১০ জনের নামে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এরপর বাদীপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ১০ জনের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। প্রথম আলোর পরোয়ানা প্রাপ্ত ৬ জন হলেন, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, কিশোর আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মহিতুল আলম, প্রথম আলোর হেড অব ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাকটিভেশন কবির বকুল, নির্বাহী শাহ পরাণ তুষার ও নির্বাহী শুভাশীষ প্রামাণিক। এছাড়া, ডেকোরেশন ও জেনারেটর সরবরাহকারী জসীম উদ্দিন, মোশাররফ হোসেন, সুজন ও কামরুল হাওলাদার। গত বছরের ১লা নভেম্বর প্রথম আলোর ম্যাগাজিন কিশোর আলো’র বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যায় ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী নাইমুল আবরার (১৫)।
অফিস : ৪৪-ক, অতিশ দীপঙ্কর রোড, মুগদা, ঢাকা । সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএস ভবন, ১২০/এ মতিঝিল, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭৫৩-৫২৬৩৩৩ ই-মেইল : dainikkalerkhobor5@gmail.com
কারিগরি সহযোগিতায় ফ্লাস টেকনোলজি