এম আই ফারুক আহমেদ, কালের খবর :
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বনশ্রীর আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। অধিক মুনাফার জন্য বেশিভাগ ভবনের নিচতলা পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান করে ভাড়া দিচ্ছেন ভবন মালিকরা।
ভবন নকশার নিয়ম অনুযায়ী নিজস্ব পার্কিং থাকার কথা। কিন্তু সেসব জায়গায় দোকান করা হয়েছে। এসব দোকানের অধিকাংশের ট্রেড লাইসেন্স নেই। অনেক বাড়িতে স্কুল ও কিন্ডারগার্টেনের জন্য ভাড়া দেয়া হয়েছে।
এতে একদিকে কমছে আবাসিক এলাকার সৌন্দর্য, অন্যদিকে এসব এলাকার মানুষের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে। রাজউকের পরিকল্পনায় বনশ্রী আবাসিক এলাকার নকশায় কোথাও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নেই।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) দাবি করছে, এ এলাকার কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয় না। রাজউক বলছে, অবৈধ এসব দোকানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা যায়, বনশ্রী ৫ নম্বর ব্লক থেকে ১ নম্বর ব্লক পর্যন্ত বেশিভাগ বাড়ির নিচে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ৪৩ নম্বর বাড়ির নিচে একটি জুস ও ফেব্রিকসের দোকান, ৩২ নম্বর বাড়িতে প্রবেশ পথ অত্যন্ত ছোট, নিচে বই ও বার্জার পেইন্টের দোকান, একই ভবনের ৩০, ২৭ ও ২৯ বাড়িতে বিভিন্ন প্রকার দোকান করে ভাড়া দেয়া হয়েছে।
ব্লক-সি-এর ১ নম্বর রোডের দুই পাশে গড়ে উড়ছে ফাস্টফুড ও সুপারশপ। তবে কিছু কিছু বাড়িতে এক পাশে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অন্য পাশে বাড়ির প্রবেশ পথের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
বেশিরভাগ বাড়িতে নেই কোনো পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। ৬ নম্বর রোডে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ও মুদি দোকান। ব্লক-ডি’র ৯ নম্বর রোডের সব বাড়ির নিচে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্কুল করা হয়েছে।
ব্লক-বি-এর ৪ নম্বর রোডের ৩৬, ৩২নং বাসায় গড়ে তোলা হয়েছে স্কুল। ৫নং রোডের দুই পাশে প্রত্যেকটি বাসার নিচে দোকান রয়েছে। নামেমাত্র কয়েকটি বাড়ির নিচে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে। বাকি সবগুলোতে একই চিত্র।
মনোয়ারা অপটিক অ্যান্ড ওয়াচ দোকানের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা সিটি কর্পোরেশন থেকে এ দোকানের ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছি। দুই বছর আগেও এসে দোকানের সাইনবোর্ড ভেঙে দিয়েছে সরকারি কর্মকর্তারা।
পরে বাড়ির মালিক আমাদেরকে বলেছে এ রুটে সব দোকান থাকবে। যে কোনো মূল্যে হোক দোকানের অনুমতি নেয়া হবে।
বি ব্লকের ৬নং রোডের রাজু এন্টারপ্রাইজে গিয়ে সিটি কর্পোরেশন ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া যায়।
দোকানের এক কর্মচারী বলেন, সিটি কর্পোরেশন যদি আমাদেরকে ট্রেড লাইসেন্স না দেয় তাহলে আমরা ট্যাক্স দিচ্ছি কিভাবে, এই ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে তো আমরা ট্যাক্স থেকে শুরু করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পর্যন্ত খুলছি। বইমেলা লাইব্রেরি অ্যান্ড ফটোস্ট্যাটের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের দোকানের ট্রেড লাইসেন্স আছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী লিয়াকত আলী বলেন, আমি কাউকে ট্রেড লাইসেন্স দিইনি। গত বছর ম্যাজিস্ট্রেট এসেছিলেন এসব দোকান বন্ধ করার জন্য, পরে আর কিছুই হয়নি।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জোন ৬-এর অথরাইজ অফিসার মোবারক হোসেন বলেন, আমরা অনেক জায়গায় উচ্ছেদ অভিয়ান চালিয়েছি। বনশ্রী এলাকার যেসব দোকান আবাসিক এলাকায় করা হয়েছে সেগুলো উচ্ছেদে অভিযান চালাব।
বনশ্রী আবাসিক সোসাইটির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, মানুষের চাহিদার কারণে বনশ্রী এলাকাতে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোসাইটি একটি সামাজিক সংগঠন। কেউ ব্যক্তি মালিকানাধীন এপার্টমেন্টের বেজমেন্টে অবৈধভাবে দোকান করলে আমরা বাধা দিতে পারি না।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল ৩ নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হেমায়েত হোসেন বলেন, বনশ্রী আবাসিক এলাকাতে যে সব দোকান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তার কোনোটির অনুমোদন নেই। প্রধান রাস্তার পাশে যে সব দোকান রয়েছে সেগুলাকে ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয়েছে।
আবাসিক এলাকায় কোনো ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয় না। যে সকল বাড়ির পার্কিংয়ের জায়গায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান করা হয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব রাজউকের। যারা ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
অফিস : ৪৪-ক, অতিশ দীপঙ্কর রোড, মুগদা, ঢাকা । সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএস ভবন, ১২০/এ মতিঝিল, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭৫৩-৫২৬৩৩৩ ই-মেইল : dainikkalerkhobor5@gmail.com
কারিগরি সহযোগিতায় ফ্লাস টেকনোলজি