কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন ও এডিসি (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার
কক্সবাজার প্রতিনিধি, কালের খবর :
মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানে ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতির অভিযোগে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামাল হোসেন ও এডিসি (রাজস্ব) আশরাফুল আফসারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তা খারিজ করে দেয়া হয়েছে।
ঘুষ আদায় ও ঘুষ নিয়ে একজনের জমির ক্ষতিপূরণের টাকা অন্যজনকে দেয়ার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়।
বুধবার দুপুরে কক্সবাজার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলাটি করেন মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের সিকদারপাড়ার মৃত ডা. আমান উল্লাহর ছেলে কেফায়েতুল ইসলাম।
কক্সবাজার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক এবং কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ খোন্দকার হাসান মো. ফিরোজ মামলার বাদী কেফায়েতুল ইসলামের ২০০ ধারায় জবানবন্দি নেন। পরে বিকালে মামলাটি খারিজ করে দেন একই আদালত।
ওই মামলায় জেলা প্রশাসককে প্রধান আসামি করার পাশাপাশি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহমদ, অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মোমিনুল হক ও দেবতোষ চক্রবর্তী, ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কানুনগো মিলন কান্তি চাকমা, সার্ভেয়ার কেশব লাল দাস, ইব্রাহিম, সিরাজুল হায়দার ও আবুল খায়ের এবং ৬ জন স্থানীয় অধিবাসীকে আসামি করা হয়।
মামলাটির অন্য ৬ আসামি ছিলেন মাতারবাড়ির লাইল্যা ঘোনা এলাকার মো. সেলিম ওরফে সেলিম উদ্দিনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, ইসলাম মিয়ার ৩ ছেলে-মেয়ে অলি আহমদ, জামাল উদ্দিন ও তাহেরা বেগম, আলী আসকরের ছেলে রোমেনা আফরোজ এবং মাতারবাড়ির মগডেইল এলাকার আবু ছালেক।
বাদীর পক্ষে মামলাটি উত্থাপন করেন কক্সবাজারের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ জাকারিয়া। তিনি বলেন, কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে যে পরিমাণ ঘুষ বাণিজ্য ও দুর্নীতি হচ্ছে তা কল্পনাবিহীন। এই ঘুষ বাণিজ্য ও দুর্নীতি প্রতিরোধে আমি (জাকারিয়া) সব সময় সর্বদায় সোচ্চার ছিলাম এখনও আছি। তার প্রমাণ এই মামলা।
মামলার এজাহারে অভিযোগ তোলা হয়, চলতি ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে বাদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের জন্য গেলে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহমদের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা অন্য আসামিদের যোগসাজশে ক্ষতিপূরণের চেক দেয়ার জন্য ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন।
বাদীর অভিযোগ, তাকে অফিসে বসিয়ে রেখে বাধ্য করে তাৎক্ষণিক ৫০ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করেন এবং ঘুষের অবশিষ্ট টাকা ৭ দিনের মধ্যে দিলে ক্ষতিপূরণের চেক দেয়ার আশ্বাস দেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ঘুষ নেয়ার পর বাদীর অধিগ্রহণ হওয়া ৯৪, ৫০৭৯, ৫০৮২ ও ৫০৮৬ দাগের ক্ষতিপূরণের চেকে মনোয়ারা বেগমসহ অন্য ৬ জনের ‘কেনা সম্পত্তি’ দেখিয়ে প্রাপ্য ১৮ লাখ ৩ হাজার ৩১৯ টাকাকে কর্তন করে বাদীকে ৮ লাখ ৭২ হাজার ২৬৯ টাকার চেক প্রদান করা হয়। অবশিষ্ট টাকা মনোয়ারা বেগমসহ অন্য আসামিদের দেয়া হয়।
বাদী কেফায়েতুল ইসলামের দাবি, মনোয়ারাসহ অন্য আসামিদের ক্রয় করা ও দখলীয় জমির দাগ নাম্বার ৫০৪১, যা অধিগ্রহণের আওতায় পড়েনি। অথচ জেলা প্রশাসকসহ অন্য আসামিরা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে এলাইনম্যান্টের বাইরের জায়গা অধিগ্রহণ দেখিয়ে মনোয়ারা বেগমসহ ৬ আসামির কাছ থেকে ৩৫ শতাংশ ঘুষ নিয়ে প্রায় ১৮ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বাদী কেফায়েতুল ইসলাম এই অপরাধের বিচার চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ঢাকার সেগুন বাগিচাস্থ সদর দফতরে যান। ওখান থেকে তাদের পরামর্শ দেয়া হয় কক্সবাজারস্থ সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলা করতে।
বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, বুধবার দুপুরে বাদীর এজাহারটি আদালত গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে বাদীর জবানবন্দিও গ্রহণ করেন। পরে বিকালে মামলাটি খারিজ করে দেয়া হয়।
এদিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী সন্তোষ বড়ুয়া বলেন, কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জমির অধিগ্রহণের বিষয়ে কেফায়েতুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনসহ ১৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আদালত আমলে নেন। পরে দুপুরে মামলাটি খারিজ করে দেয়া হয়।
কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার যুগান্তরকে বলেন, কেফায়েতুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি ঘুষ গ্রহণ ও দুর্নীতির অভিযোগে আদালতে মামলা করেছে বলে শুনেছি। তবে আমি (এডিসি রাজস্ব) তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। তাছাড়া আমি ঘুষ গ্রহণের সঙ্গে জড়িত নয়।
অফিস : ৪৪-ক, অতিশ দীপঙ্কর রোড, মুগদা, ঢাকা । সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএস ভবন, ১২০/এ মতিঝিল, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭৫৩-৫২৬৩৩৩ ই-মেইল : dainikkalerkhobor5@gmail.com
কারিগরি সহযোগিতায় ফ্লাস টেকনোলজি