কালের খবর রিপোর্ট :
বাংলাদেশের ইতিহাসে ক্যাসিনোতে প্রথমবারের মত অভিযান শুরু হয়েছে। যুবলীগের পরিচালনায় ৬০ ক্যাসিনোর তালিকা নিয়ে অভিযান অব্যাহত থাকবে। র্যাবের পাশাপাশি অভিযান চালাতে পারে পুলিশের বেশ কয়েকটি ইউনিট। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এমনটিই ইঙ্গিত দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
র্যাব জানায়, বুধবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত ঢাকার মোট চারটি ক্যাসিনোতে একযোগে অভিযান চালানো হয়েছে। এতে গ্রেফতার হয়েছে মোট ২০১ জন। এর মধ্যে মতিঝিলের ইয়াংমেন্স কাব থেকে ২৪ লাখ ২৯ হাজার নগদ টাকাসহ ১৪২ জনকে আটক করা হয়। বনানীর আহম্মেদ টাওয়ারে অবস্থিত গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ নামক ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র্যাব। কাউকে না পেয়ে ক্যাসিনোটি সিলগালা করা হয়।
এখন আর ইউরোপ-আমেরিকা কিংবা সিঙ্গাপুরে নয়, রাজধানী ঢাকার ৬০টি স্পটে অবৈধ ক্যাসিনো (জুয়ার আসর) ব্যবসা চলছে। কেন্দ্রীয় ও মহানগর উত্তর-দণি যুবলীগের একশ্রেণির নেতা এ ব্যবসায় জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবৈধভাবে চালানো এসব জুয়ার আসরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কমপে ছয় নেতা মাঝেমধ্যে অংশগ্রহণ করেন। ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য নেপাল, থাইল্যান্ডসহ চারটি দেশ থেকে প্রশিতি নারীদের আনা হচ্ছে। প্রশিতি জুয়াড়ির পাশাপাশি নিরাপত্তা প্রহরীও আনা হচ্ছে বিদেশ থেকে। ক্যাসিনোগুলোতে প্রতি রাতেই কোটি কোটি টাকা উড়ছে। এর পরিমাণ কমবেশি ১২০ কোটি টাকা হতে পারে। জানা গেছে, যুবলীগের তত্ত্বাবধানে ৬০টি বড়ো ক্যাসিনো চললেও সংগঠনটির থানা-ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লাতেও বসছে জুয়ার আসর। পাড়া-মহল্লার জুয়ার আসরগুলোতেও লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলা হচ্ছে। আর যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগর উত্তর-দেিণর একশ্রেণির নেতাদের শেল্টারে ৬০ স্পটে চলছে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা জুয়ার খেলা। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার খেলা হচ্ছে। পাহারায় নিয়োজিত থাকে বিদেশ থেকে আনা নিজস্ব অস্ত্রধারী টিম। এদের আইনি ঝামেলা থেকে সুরা দেয় খোদ পুলিশ প্রশাসনেরই কিছু অসাধু কর্মকর্তা।
জানা গেছে, রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আটটি স্থানে যুবলীগ মহানগর দেিণর এক শীর্ষ নেতার তত্ত্বাবধানে ক্যাসিনো ব্যবসা চলছে। এেেত্র কয়েকটি বহুতল ভবনের ছাদ দখলে নিয়ে ক্যাসিনো চালানো হচ্ছে। এখানেই মূলত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ছয় নেতাসহ অনেকের আনাগোনা রয়েছে। রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকায় তিনটি ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দেিণর এক সাংগঠনিক সম্পাদক। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্পোর্টিং কাব, অভিজাত এলাকার কাব ও বিভিন্ন বাসাবাড়িতে রাত গভীর হলেই বসছে কোটি কোটি টাকার জুয়ার আসর। মতিঝিলের কাবপাড়া ছাড়াও দিলকুশা, ব্যাংক কলোনি, আরামবাগ, ফকিরেরপুল, নয়াপল্টন, কাকরাইল, গুলিস্তান, ওসমানী উদ্যান, বঙ্গবাজার এলাকায় নিয়মিত জুয়ার আসর বসে। মতিঝিলের কাবপাড়ায় অবস্থিত ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং কাবে অনানুষ্ঠানিক ক্যাসিনো ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই অভিযোগ রয়েছে গুলশান লিংক রোডের ফু-ওয়াং কাব, উত্তরা কাব, নিউমার্কেট এলাকার এজাজ কাব, কলাবাগান কাব, পল্টনের জামাল টাওয়ারের ১৪ তলাসহ বেশ কয়েকটি নামি দামি রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে।
রাজধানীর ক্যাসিনোগুলোতে ওয়ান-টেন, ওয়ান-এইট, তিন তাস, নয় তাস, কাটাকাটি, নিপুণ, চড়াচড়ি, ডায়েস, চরকি রামিসহ নানা নামের জুয়ার লোভ সামলাতে না পেরে অনেকেই পথে বসছেন। এতে পারিবারিক অশান্তিসহ সামাজিক নানা অসংগতি বাড়ছে। ভুক্তভোগীরা সর্বস্বান্ত হলেও জুয়ার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আয়োজক চক্র। আর এ কাজে সহায়তা দিচ্ছে এক শ্রেণির প্রভাবশালী। অথচ আইন অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ হলেও অভিযোগ রয়েছে, আইনন্ডৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর কিছু লোককে ম্যানেজ করেই দিনের পর দিন চলছে এসব কর্মকান্ড। তবে গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারির পর সেগুনবাগিচায় কয়েকটি ক্যাসিনো দুই দিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
সম্প্রতি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ঢাকায় যুবলীগের নেতারা অবৈধভাবে ক্যাসিনো ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এেেত্র বহুতল ভবনের ছাদ দখলে নেয়া হয়েছে। যুবলীগের সবার আমলনামা আমার কাছে রয়েছে। এসব বন্ধ করতে হবে। আমি জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর একজন সদস্য জানান, সম্প্রতি দলীয় ফোরামের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবলীগের মহানগর উত্তর-দেিণর প্রায় সব নেতা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় ক্যাসিনো পরিচালনা করে আসছে। রাজধানীর সর্বত্র যুবলীগের নেতাদের ক্যাসিনো গড়ে উঠেছে। এসব বন্ধ করতে হবে।
র?্যাব আরও জানায়, মতিঝিলের ঢাকা ওয়ান্ডারার্স কাবে অভিযান চালিয়ে ১০ লাখ ২৭ হাজার টাকা, ২০ হাজার ৫০০ জাল টাকাসহ ক্যাসিনোটি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কাবে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬০০ টাকাসহ ক্যাসিনো পরিচালনা ও খেলার অভিযোগে মোট ৪০ জনকে আটক করা হয়। এছাড়া এ অভিযানে বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার মোট ২০১ জনের মধ্যে ৩১ জনকে ১ বছর করে এবং বাকিদের ৬ মাস করে কারাদন্ড দিয়েছেন র?্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া অবৈধ ক্যাসিনোর মালিকানা, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র বহন করার অভিযোগে ঢাকা মহানগর দণি যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার মতিঝিল থানার পাশেই ইয়ংমেন্স কাবের ক্যাসিনোতে অভিযানের পর থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ সব জেনেও কেন চুপ করে ছিল, কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, সে বিষয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার তারা ঢাকার ক্যাসিনো গুঁড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
অফিস : ৪৪-ক, অতিশ দীপঙ্কর রোড, মুগদা, ঢাকা । সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএস ভবন, ১২০/এ মতিঝিল, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭৫৩-৫২৬৩৩৩ ই-মেইল : dainikkalerkhobor5@gmail.com
কারিগরি সহযোগিতায় ফ্লাস টেকনোলজি