তাবলীগের সাথী ভাই আমার ! আপনাকেই
বলছি : ফয়সাল হাবিব। কালের খবর :
তাবলীগের বর্তমান সময়ে আমি আমার
রাস্তা কিভাবে ঠিক করব? এই বিষয়ে
আমার চিন্তাভাবনাগুলো আমি শেয়ার
করছি। প্রথম কথা হল আমি তাবলীগের কাজকে কী মনে করি এই বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমি এই কাজ কেন করি। আমি কেন চিল্লা, তিন চিল্লা দেই। আমি কেন পাঁচ কাজ করি। আমি কেন মাস্তুরাতে সময় লাগাই। শরিয়তের দৃষ্টিতে এ কাজের হুকুম কি। এগুলো আগে আমার সামনে থাকতে হবে।
আমার আসল উদ্দেশ্য দ্বীন নাকি আসল উদ্দেশ্য তাবলীগের প্রচলিত পন্থা, পদ্ধতি?
আমি দ্বীনের দিকে ডাকার জন্য তাবলীগ
করি নাকি আমি তাবলীগের উসুল ও আদবের উপরে উম্মতকে উঠাতে তাবলীগ করি। আমি কি মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকছি নাকি
আমি তাবলীগ করি তাই তোমাকে
আমার মতাদর্শ মানতে হবে এই জন্য তাবলীগে যোগ দেওয়ানোর জন্য তাবলীগ করি।
এখন বিরতি, আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন আর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন। এগুলো আগে ঠিক করে নিন।
আমি তাবলীগের কাজকে দাওয়াতের একটি রূপ মনে করি। দাওয়াতের বিভিন্ন ধরণ হতে পারে। মাওলানা যাকারিয়া
রহমাতুল্লাহি আলাইহি 'ফাযায়েলে
তাবলীগ' এর শুরুতেই লিখেছেন, 'এমনিভাবে মুয়াযযিনগণ আযানের দ্বারা, মুজাহিদগণ তলোয়ারের দ্বারা, আলেম উলামাগণ দলিল-প্রমাণের দ্বারা- এভাবে যেকেহ যেকোনো পদ্ধতিতে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করে সেই এ সুসংবাদের যোগ্য হবে।'
এখন তাবলীগের কাজ আমি কেন করব?
মাওলানা তারিক জামিল সাহেব বিভিন্ন
বয়ানে বলেন যে, এরকম সহজ গঠনমূলক ও সুষ্ঠু পরিচালনা পদ্ধতির মাধ্যমে দাওয়াতের কাজের শরিয়তের সমস্ত উসুল ও আদব মেনে চলে উম্মতকে সহজে দাওয়াতের ফিকিরে ফিকিরমন্দ করার জন্য তাবলীগের কাজের
কোন বিকল্প বর্তমান জামানায় নাই। তাই
আমি দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করি।
আল্লাহর হুকুম আছে দাওয়াত দাও, আল্লাহর হুকুম আছে সৎ কাজের আদেশ কর, অসৎ কাজের নিষেধ কর।
তো সহজ কথা আমি তাবলীগের কাজকে
দাওয়াতের একটি উত্তম গঠনমূলক কর্মপন্থা মনে করি তাই এই কাজ করি। শরিয়ত দাওয়াতের হুকুম দেয় এই হুকুম মানা হল মাকসাদ, আর দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ হল মাকসাদে পৌছার জন্য মাধ্যম। শরিয়ত বলে জান্নাতের দিকে দৌড়াও, আর আমরাও জানি
জান্নাত হল বাড়ি আর তাবলীগ হল গাড়ি,
সাথীরা এই কথা শুনেছেন আশা করি।
ভাই ও বোন আমার, আসল উদ্দেশ্য 'মান রব্বুক', 'মা দীনুক', 'মান নাবিয়্যুক' ঠিক করা, তাবলীগ করি এইটা ঠিক করার জন্য। আল্লাহ্ আখেরাতের ময়দানে পাঁচ কাজ জিজ্ঞাসা করবেন না, তিন চিল্লা চিল্লা জিজ্ঞাসা করবেন না, তাবলীগ করে আমার মাঝে কতটুকু দ্বীন আসল এইটাই আসল উদ্দেশ্য।
শয়তান চায় পথকে উদ্দেশ্য বানিয়ে দিতে,
সিলেবাসকেই জ্ঞান মনে করলে ভুল হবে।
সিলেবাস বানানো হয়েছে জ্ঞান অর্জনের
জন্য। রাস্তার উদ্দেশ্য মনযিলে পৌছানো,
তাবলীগের কাজ হল দ্বীন নিজের মাঝে
নিয়ে আসার রাস্তা, এইটা উদ্দেশ্য না।
এখন আবার অনেকে বলবেন তাহলে যে
এতদিন শুনে আসলাম দাওয়াতের কাজকে যিন্দেগীর মাকসাদ বানিয়ে করার কথা এইটা কি হল। আসলে এইটা তারগীবের জন্য বলা হয়। যাতে আমাদের দিলে এই কাজের আহমিয়াত আসে (উদ্দেশ্য হল বরফ সংরক্ষণ
এখন ফ্রিজের ব্যাপারে এত তাগিদ কারণ
ফ্রিজ বরফ সংরক্ষণের একটি পদ্ধতি, ঠিক একই ভাবে তাবলীগের এত কুরবানীর কথা বলার উদ্দেশ্য দ্বীনের জন্য ত্যাগের মানসিকতা গড়া) এর মানে এই না যে দাওয়াত ও তাবলীগের এই প্রচলিত পন্থা মুসলমানের জীবনের মাকসাদ হতে হবে।
তাহলে তো মাওলানা ইলিয়াস
রহমাতুল্লাহি আলাইহির আব্বা মাওলানা
ইসমাঈল রহমাতুল্লাহি আলায়হি থেকে শুরু করে জুনায়েদ বাগদাদী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি সহ ইমাম আবু হানীফা
রহমাতুল্লাহি আলায়হি, মোল্লা আলী
কারী রহমাতুল্লাহি আলায়হি সহ আগেকার সমস্ত বুযুর্গ তাঁদের মাকসাদ অর্জন করতে পারেন নি। প্রতি যুগেই দাওয়াতের কাজ হয়েছে, একেক যুগে একেক পদ্ধতিতে। এই যুগে
তাবলীগের পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি
উপকারী। এই কথাগুলো বুঝে থাকলে সামনের কথা বুঝা সহজ হবে।
আমরা জানি তাবলীগের কাজ সুন্নি
মুসলমানদের একটি কাজ তাই না? এইটা তো জানেন। কখনো কোন শিয়াকে তাবলীগে যেতে দেখেছেন? দেখবেন না। কারণ এটা উম্মতের কাজ যে বলি আমরা আসলে আমাদের মুরুব্বিরা সহজ করে বুঝানোর জন্য আমদের বলেন। আসল কথা হল উম্মত কাকে বলে এই কথা বুঝতে হবে। কিয়ামতের দিন
কিছু মানুষের চেহারা কালো হবে কিছু
মানুষের চেহারা ফরসা হবে। এই আয়াতের তাফসীরে মাওলানা ইউসুফ (রহমাতুল্লাহি আলায়হি) তাঁর জীবনের শেষ বয়ান যা তিনি রায়বেন্ড মারকাজে করেছিলেন সেখানে বলেছিলেন যারা উম্মতকে এক করার ফিকির করবে তাঁদের চেহারা উজ্জ্বল হবে আর যারা উম্মতকে দ্বিধা বিভক্ত করবে তাঁদের চেহারা কালো হবে। এবং এই আয়াতে মুফাসসিরিনগণ বলেছেন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এর চেহারা
উজ্জ্বল হবে আহলে বিদাত ওয়াল ফুরকা
(বিদাতি ফিরকা) দের চেহারা কালো
হবে। তাহলে কি বুঝে আসল?
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এর একটা বৈশিষ্ট্য হল উম্মতকে এক করা, ভাগ না করা। উম্মতের মহব্বত দিলের মধ্যে রাখা একে অপরের জন্য আল্লাহর জন্য মহব্বত করা, নসিহত করা।
আরও বুঝা গেল আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাহ হতে হবে, উম্মতকে এর ভিত্তিতে এক করতে হবে।
এবার আসুন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এর কিছু দিক নিয়ে আলোচনা করি। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ হল আল্লাহর রসুলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের পথ। উম্মতের মধ্যে তেহাত্তরফিরকা হবে শুনেছেন না? এক দল জান্নাতে
যাবে আর বাকিরা যাবে না। তারা
কারা? শুধু তাবলীগওয়ালারা? আসলে
এইটাকে কোন দলের সাথে লেবেল
লাগানো যাবে না। কেউ জামাত ইসলামী
হয়েও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ হতে পারে যদি সে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল
জামাআহের সকল আকীদাকে মন থেকে
মেনে নেয়। আবার কেউ তাবলীগের মধ্যে
থেকেও আহলুস সুন্নাহ এর বাইরে চলে যেতে পারে। আমরা শুনেছি না
“যে বড়দের সম্মান করেনা ছোটদের স্নেহ
করেনা আলেমদের তাযিম করেনা সে
আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত না”
এই হাদিস শুনেছেন এবং আপনি বয়ানও
করেছেনএখন দেখেন, আল্লাহর রসুল বললেন আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত না।মানে কি? সে কি আগের নবীর যামানার? এটা কিভাবে সম্ভব। তাহলে বুঝা গেল এখানে উম্মত বলতে নাজাতপ্রাপ্ত উম্মত (ফিরকায়ে নাজিয়াহ বলা হয় আরবীতে), অর্থাৎ সেই বিখ্যাত হাদীস অনুযায়ী জান্নাতে যাওয়ার জন্য যেই এক ফিরকা, সেই ফিরকা হল এই হাদীসের উদ্দেশ্য। তার মানে যদি কেউ তাবলীগের মধ্যে থেকে এই তিন কাজের এক কাজ করে সে আহলুস সুন্নাহের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাংঘর্ষিক একটি কাজ করেছে। আবার কেউ যদি তাবলীগের মধ্যে থেকে মনে করে যে ওলীর মর্যাদা নবীর উপরে সে যতই তাবলীগ করুক আক্বীদা তার ঠিক নাই, কেউ যদি মনে করে যে তাবলীগই
শুধু জান্নাতে যাবে তার চিন্তাও ভুল, কেউ
যদি মনে করে যে যারা তাবলীগ করেনা
তাদের ইলম পরিপক্ক না, তাহলে মাওলানা ইয়াহয়া রহমাতুল্লাহি আলায়হি
(যাকারিয়্যা রহমাতুল্লাহি আলায়হির
পিতা)এর ইলম পরিপক্ক না, বেহেশতি
যেওরের লিখক মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর ইলম পরিপক্ক না।
তাঁর মানে বুঝা গেল তাবলীগের কাজ
উম্মতের সবার দায়িত্ব বলতে যে কথা বলা হয় আসল কথা হল তাবলীগের সুন্নি
মুসলিমদের দায়িত্ব (আহলুস সুন্নাহ ওয়াল
জামাআহ এর অনুসারীদের)। অন্যান্যদের
অনেকে তো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের খতমে নবুওয়তই মানে না। সেক্ষেত্রে তাঁদের উপরে তো আর দায়িত্বই নাই।
এগুলো হল প্রাথমিক আলোচনা।
এখন আসুল তাবলীগের বর্তমান সবচেয়ে
বেশি আলোচিত ব্যক্তিত্ব মাওলানা সাদ
সাহেবের ব্যাপারে আমার কি ধারণা তা
শেয়ার করি। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে মাওলানা সাদ সাহেবের হাতে বায়াত। ২০১৬ সালের ইজতেমাতে বায়াত হয়েছিলাম, সে বছর ইজতেমার তাশকিলে ছিলাম, অনেক আগ্রহের সাথে বায়াত হয়েছিলাম। উনার কথাগুলো এখনো ঠোঁটস্থ তাঁর সম্মান আমার দিলে অনেক বেশি ছিল যতক্ষণ না উনার থেকে এমন সব কথা প্রকাশ পেতে আরম্ভ করল যেগুলো অধিকাংশ উলামায়ে কিরামের কথার সাথে সাংঘর্ষিক। আপনি বলবেন হয়ত উনার কথা মুজাদ্দিদদের মত
(প্রত্যেক সহস্রাব্দিতে একজন করে
মুজাদ্দিদ আসেন)। বা উনার কথা হয়ত
অন্যান্য আলেম উলামাগণ বুঝতে পারছেন না। তাই উনার বিরোধীতা করছেন। আচ্ছা ঠিক আছে, তার মানে উনি যে নতুন কথা বলছেন তা আপনি স্বীকার করছেন।
তাহলে নতুন কথা বলবেন কেন? তার মানে আগে থেকে মাওলানা ইলিয়াস, মাওলানা ইউসুফ ও মাওলানা ইনামুল হাসান (রহমাতুল্লাহি আলায়হিম আজমাঈন)গণ কি এসব জানতেন না? এগুলো এখন কোথা থেকে নাযিল হচ্ছে? নতুন উসুল কোথা থেকে আসছে? এগুলো লাগবে কেন? তাহলে আর
জামাতে গিয়ে বড়দের মালফুজাত পড়ার
কথা বলেই বা লাভ কি? শুধু মাওলানা সাদ সাহেবের কথা অনুযায়ীই চলা শুরু হোক। উনার নতুন কথা হয়ত উলামায়ে কিরামবুঝতে পারছেন না।
এর ব্যাখ্যা মুফতি কিফায়েতুল্লাহ সাহেব
দিয়েছেন (এই প্রশ্নই ডাঃ তালহা ভাই
করেছিলেন এই কিছুদিন আগে যখন উনি সহ আমাদের আরো কয়েক জন হাটহাজারী গিয়েছেন)। উল্লেখ্য মনে করতে পারেন যেমুফতি কিফায়েতুল্লাহ সাহেব হয়ততাবলীগে সময় লাগান নি (অতএব উনি বাইরে থেকে লোকমা দিচ্ছেন উনার লোকমা নেওয়া যাবে না)। মুফতি কিফায়েতুল্লাহ সাহেব তাবলীগে সময় লাগিয়েছেন। আমি নিজে উনার সাথে সফরে ছিলাম। উনাকে উলামাদের সালের সফরে তাশকিল করতে দেখেছি। উনি বলেছেন যে সফরে বের হয় এই কাজের তরতীব শিখতে, কাজ শিখতে, ইলম তো তোমাদের কাছে আছেই। যাই হোক মুফতি সাহেব ঐ ভাইয়ের উত্তরে বললেন,
-আপনি কি করেন
-ডাক্তার
-একজন রোগী এসে বলল অমুক ডাক্তার অনেক নতুন নতুন ট্রিটমেন্ট দিচ্ছেন খুবি ভালো ডাক্তার। আপনি জিজ্ঞাসা করবেন
কিভাবে বুঝলেন যে সে ভালো ডাক্তার।
রোগী বলল উনি যেগুলো বলেন সেগুলো আর কেউ বলেন না যে তাই। অন্যান্য
ডাক্তাররা মেডিকেল সাইন্স খুঁজে
দেখলেন যে এই নতুন ডাক্তার যা যা বলছেন তা মেডিক্যাল সাইন্সের সাথে
সাংঘর্ষিক। তারা রোগীকে বলবেন যে, আপনারা তার কথা শুনবেন না।
ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে তাবলীগের
ক্ষেত্রে। মাওলানা সাদ সাহেবের
ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দ উম্মতকে
সতর্ক করতে ফতোয়া দিয়েছেন। উনি আমির হবেন কি না সেটা দেওবন্দ জানায়নি ।এটা তাবলীগের ব্যাপার। দেওবন্দ ইলমী খিয়ানতের দিকটা তুলে ধরেছেন। এখন আসুন মুন্তাখাব হাদীস নিয়ে। আমার সাফ মনে আছে আগে শুধু ফাযায়েলে আমল পড়া হত। মুন্তাখাব হাদীস পড়তাম না আমরা জামাতে। প্রথম মুন্তাখাব হাদীস ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য প্রেস্ক্রাইব করা হল। পরে আস্তে আস্তে এখন ইজতেমাঈ তালিমের পয়েন্টে, জামাতে ঘরে বাইরে পড়া হতে লাগল। ব্যাপার তা না। পড়া হবে কি হবে না তা পরে বলছি, আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম পাকিস্তানে এইটা পড়া হয় না। কেন তা হবে কেন? ধরেন মাওলানা সাদ সাহেবের নামে কোন অভিযোগ নাই, ধরেন মুন্তাখাব হাদীস উনি প্রবর্তন করেন নাই। তাহলে পাকিস্তানে হয় না, ইন্ডিয়াতে হয়, এগুলা আবার কি? যদি হবে তাহলে সব জায়গায়ই হবে আর না হলে হবে না। এইটা যে ঘাপলার জিনিস, মুরুব্বিরা যে এটাতে একমত না, সেটা তো এমনিতেই বুঝা যায়। আগে সাথীদের কিছু বলতাম না, এখন বলা দরকার হয়ে গিয়েছে।
এগুলো এখন নজরে পড়ার পর্যায়ে চলে
গেছে। আবার দেখেন আগে আমরা ছয় নম্বর কত সহজে বলতাম। উদ্দেশ্য লাভ হাসিল করার তরীকা। একজন গ্রামের মানুষ বলতে পারত। এখন এত কঠিন করে বলতে বলা হয় যে মাশা আল্লাহ্, ইউনিভার্সিটির ছাত্রদেরও পুরা ছয় নম্বর রপ্ত করতে পুরা একমাস লেগে যায়। বিশেষ করে দাওয়াত ও তাবলীগের
উদ্দেশ্য যেটা বলা হয় ঐটা পড়ে দেখেছেন কত কঠিন? নিজের ইমান ও আমলকে সহী করা, উম্মতকে সহী ইমান ও আমলের উপর নিয়ে আসার জন্য রসুলুল্লাহ সাল্লাল্ললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরীকাকে পুরা দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করা। তার মানে কি? একটু ভালো করে দেখুন তো দ্বীন প্রতিষ্ঠা উদ্দেশ্য নাকি দ্বীনের এই মেহনতের যেপন্থা সাদ সাহেব মনে করে রেখেছেনসেটা প্রতিষ্ঠা করা উদ্দেশ্য?
পড়ে দেখুন আরেকবার।
আমি আলেম নই, কিন্তু উলামাদের
সংস্পর্শে এসে অন্তত রাস্তা আর উদ্দেশ্য
বুঝতে পেরেছি। তাবলীগেরই অবদান এইটা। কিন্তু এখন আর ঐরকম তাবলীগ পাই না আমি। শুধু বয়ানেই বলা হয় উলামাদের যিয়ারত ইবাদত এক্বীন কর।
যাই হোক আমার কাছে মাওলানা সাদ
সাহেবের ব্যাপারে সবচেয়ে যে বিষয়টি
আপত্তিকর লাগে তা হল সবকিছুকেই তিনি সাহাবাদের সীরাত থেকে টেনে নিয়ে
এসে তাবলীগের সাথে ফিট করতে চান। আর একারণে সাথীদের মাঝেও এই ধরণের একটা চিন্তাধারার প্রকাশ পেতে দেখেছি আমি। আমি নিজেও এরকম করেছি, কুয়েটে থাকতে একুশে হলে যারা ছিল তারা বলতে পারবে আমি হায়াতুস সাহাবা থেকে অনেক সময় বয়ান করতাম আর তাবলীগের বিভিন্ন আমল ইস্তেম্বাত (উপপাদন) করতাম। যেমন ধরেন এক সাহাবী আরেক সাহাবীর সাথে মিলতে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতেন। এইটা উনাদের আমল ছিল। এখন এইটাকে খুসুসী গাস্তের দলিল বানানোর তো দরকার নাই।
আমি তা করতাম।
আল্লাহর জন্য দেখা সাক্ষাত করার যে আমল আছে সেভাবে বর্ণনা করেন। সেই কথাই বলেন। আপনি বলেন যে সাহাবাগণ আল্লাহর জন্য দেখা সাক্ষাত করতেন তাই আমরা করছি। এটা
ঠিক আছে। কিন্তু এর অর্থ এই না যে সমস্ত কাজকেই সাহাবীদের জীবন থেকে প্রমাণ করতে হবে। আমার কাজকে সাহাবীদেরসাথে ফিট করতে হবে। সাহাবীদেরকাজকে আমার কাজের সাথে ফিট করা হল উল্টা আমল। আর তাবলীগের এই কাজকে ফিটদান করার কাজ এখন দরকার নেই। এই কাজ মুসাল্লাম (গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে)
অলরেডি। এই কাজের মধ্যে সাথীদের
লাগানোর ফিকির করতে হবে।
আবার আরেকটা বিষয় দেখেন। দাওয়াত
কোথায় দিবেন ভাই? হার হালতে, হার
সময়ে, হার জায়গায়, হার আদমিকো। এইটা না আমাদের কথা ছিল। এখন দাওয়াতের ক্ষেত্রে কি বলা হচ্ছে? মসজিদে এনে ইমানও আমলের কথা বলতে হবে, এইগুলো কিছু নতুন
সংযোজন। এগুলোর কারণে মাওলানা সাদ সাহেবের সাথে পুরনো সাথীদের বনিবনা হয়নি। তাবলীগের মধ্যে যখন থেকে লেগেছি তখন থেকেই জানি যে তাবলীগে মাসলা মাসায়েলের আলোচনা করা নিষেধ। আপনি মাওলানা সাদ সাহেবের ব্যাপারে দেওবন্দ যেই ফতোয়া দিয়েছে সেগুলোর তাত্ত্বিক বিষয়গুলো হয়ত না বুঝতে পারেন।
তাবলীগওয়ালা হিসাবে বলেন, ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল নিয়ে নামাজ
হবে কি হবে না এই বিষয়ে আলোচনা করার কি দরকার আছে তাবলীগে? আমার কাছে এইটার কোন প্রয়োজনীয়তা চোখে পড়ে না। ওলীমার মধ্যে রুটি খাওয়া আর গোশত খাওয়া এইটা কি খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার তাবলীগে? আচ্ছা আপনি বলেন তাবলীগের কাজে ছয় নম্বর কি পুরা দ্বীন নাকি না এই কথার প্রমাণ করার দরকার আছে? আচ্ছা আসহাবে কাহফে কুকুর ছিলনা বাঘ ছিল এইটা নিয়ে কথা বলার কি দরকার, বলেন? এইগুলো সাদ সাহেব যে
করেছেন এগুলো তো সামান্য তাবলীগের
সাথীও বুঝতে পারেন যে এগুলোর দরকার নাই। আর বড় ব্যাপার হল উনার শব্দ চয়নগুলো শুনলে বুঝতে পারবেন যে উনি কি শক্ত করে কথাগুলো বলেন। উনি বলেন যে “মুঝে সামাঝ মে নেহি আতা লোগ ছে নাম্বারকো পুরি দিন ক্যাসা নেহি
বোলতে? কিয়া ইয়ে মুমকিন হায়?”
এভাবে বলেন, “আমার একথা বুঝে আসে না সাথীরা কিভাবে বলে যে ছয় নম্বর পুরা দ্বীন না, এটা কি সম্ভব”। উনি প্রায়ই এভাবে বলেন, “মে ইয়ে কেহ রাহা হু” “কান খুল কার সুনলো”, “মে আরয কারতাহু” অর্থাৎ “আমি একথা বলছি”, “কান খুলে শুনে নাও”, “আমি আরয করছি”। কথাগুলো তাবলীগের
হিকমতযুক্ত পন্থা থেকে অনেকটাই হটে
গিয়েছে স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যায়। আর
ব্যাপার হল এই কথাগুলো বলে যদি সর্বসম্মত কোন কথা বলতেন তাও হত। বললে এমন কথা বলেন অনেক সময় যা খুবি আজব ধরণের হয়ে যায়। আরেকটা কথা, “পুরা দুনিয়াকা হালাত ইয়ে হ্যায় কে, মাক্কাহ আওর মাদিনাকি বাদ আগার কিসি জাগা কাবেলে ইতায়াত, কাবেলে ইহতিরাম আওর কাবেলে তাযিম হো তো ওহ সিরফ নিযামুদ্দিন হ্যায়” অর্থাৎ, “পুরা দুনিতার অবস্থা এরকম যে, মক্কা মদিনার পর যদি কোন জায়গা এমন থাকে যার সম্মান করা উচিত, ইতায়াত করা উচিত, আর সম্ভ্রমরক্ষা করা উচিত তা হল নিযামুদ্দিন।” এই কথাগুলো কি আপনি বিশ্বাস করেন। মক্কা মদিনার পর মসজিদে আকসা কই যাবে তাহলে?
আর এর চেয়ে বড় বিষয়গুলো দারুল উলুম দেওবন্দ বলে দিয়েছে। মাওলানা সাদ সাহেবের যেই ব্যাপারটিতে আমি ব্যথিত হই তা হল উনি কেন এভাবে কথা বলেন যার কারণে উনি নিজে প্রশ্নবিদ্ধ হন। এতবার দারুল উলুম দেওবন্দ ফতোয়া দিল। কিন্তু উনি উনার সেই নতুন নতুন ধরণের কথা বলা ছাড়েন নি। যদি উনি আমির হনও তারপরেও এধরণের কথাগুলো উনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
উনি চান যে তাবলীগের কাজকে
সাহাবাওয়ালা তরতীবে উঠাতে, তাহলে
প্রশ্ন উঠে যে এতদিন তাবলীগের কাজ কি
হাওয়ার তরতীবে চলেছে? সাহাবাওয়ালা
তরতীবে উঠাতে চাইলে কিতালের কথা
আসবে, কই সেটা তো আলোচনা হয় না
তাবলীগে।
তাবলীগের কাজের উসুলগুলো এভাবে
বানানো হয়েছে যাতে করে চার
মাযহাবের মানুষই তা মেনে নিতে পারে।
মাসলা মাসায়েলের আলোচনা এখানে
নাই। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি। এখন কেউ যদি মাসলা মাসায়েলের আলোচনা করে তাহলে সে তাবলীগের উসুলের খেলাফ করেছেন এটা তো বুঝেন।
আরেকটা বিষয়, আচ্ছা “হযরতজী” শব্দটার ব্যাপারে আপনার কি মনে হয়, আমার কাছে ব্যাপারটা সন্দেহযুক্ত লাগে কেন যেন? আচ্ছা বলেন মাওলানা ইনামুল হাসান সাহেবের পরে আর কেউ কি হযরতজী বলে সম্বোধন করা হয়েছে? হয়নি। এখন নতুন করে উনাকে হযরতজী বানানো হচ্ছে কেন? অনেক আগে থেকেই শুনে আসছিলাম ইমাম মেহদি (রাদিয়াল্লাহু আনহু) নাকি তাবলীগের চতুর্থ হযরতজী হবেন। এর আগে
কোন হযরতজী হবে না। এখন আবার কোথা থেকে নতুন করে উনি হযরতজী হলেন। উনি কি ইমাম মেহদী নাকি? আপনার কাছেও কি ব্যাপারটা আশ্চর্য লাগে নাই? এই হল তাবলীগের প্রেক্ষাপটের কিছু দিক যার কারণে আমার দিলে সাদ সাহেবের ব্যাপারে যে মহব্বত ছিল তা কমে গেছে। আমি এখনও তাঁকে মহব্বত করি। কিন্তু
আগের মত না। এবার আসুন উনাকে আমির মানা না মানার ব্যাপার নিয়ে
একটা হাদীস নিয়ে আলোচনা করব
আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন “যে আমার আমিরকে অনুসরণ করবে সে
আমাকে অনুসরণ করল, আর যে আমাকে অনুসরণ করল সে আল্লাহকে অনুসরণ করল” উল্লেখ্য এখানে বলা হয়েছে আমার আমির
(“ইয়া মুতাকাল্লিম” (উত্তম পুরুষের সর্বনাম) ব্যবহার হয়েছে,)এখন ব্যাপার হল আমার আমির মানে কি?
আমির হতে হলে আল্লাহর রসুলের পক্ষ
থেকে হতে হবে। মানে হল “মা আনা
আলায়হি ওয়া আসহাবী” (ঐ হাদিস মতে
আমি ও আমার সাহাবাগণ যে পথের উপর আছি) সেই পথের উপর থাকতে হবে। কারো কথার মধ্যে যখন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এর বাইরের কোন কথা পাওয়া যাবে সে ব্যক্তি আমির হওয়ার যোগ্যতা হারাবে, আর তাঁকে মানার অর্থ আল্লাহর রসুলকে মানা হবে না।
আগে আমির ঠিক করেছেন আল্লাহর নবী
নিজে অতএব কথা ছিল আমার আমির।
এখন আল্লাহর নবী নাই। নবীর ওয়ারিস গণ আছেন। আমি তাবলীগ করি উলামায়ে কিরাম তাবলীগ করতে বলেছেন তাই। উলামায়ে কিরাম মানে শুধু দারুল উলুম দেওবন্দ না। বাংলাদেশের উলামায়ে কিরামও উলামা। উনারাও নবীর ওয়ারিস। এখন উনাদের সম্মতিক্রমের যখন বাংলাদেশের কাকরাইলের উলামায়ে কিরামগণ সাদ সাহেবের কর্তৃত্ব থেকে বের
হয়ে আসছেন, ওয়াসিফ সাহেব ও নাসিম
সাহেবের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন এই
কারণে আমিও উলামাদের সমর্থন করছি।
এই গেল তাত্ত্বিক দিক।
এখন আসেন তাবলীগের দিক থেকে।
আচ্ছা আপনি কি জানেন ২০১৫ সালে
রায়বেন্ড ইজতেমায় মাওলানা সাদ সাহেব
সবার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আপনি
তো তাবলীগ করেন মাশওয়ারার ফায়সালা না মানার অর্থ কি আপনি জানেন না?
মাশওয়ারা হয়েছিল যে মাওলানা ইনামুল
হাসান রহমাতুল্লাহি আলায়হি যে শুরা
বানিয়ে গিয়েছিলেন সেটা মুকাম্মাল
করা হোক। [যার মাঝে এখন মাওলানা সাদ সাহেব আর হাজী আব্দুল ওয়াহহাব সাহেব বেঁচে আছেন (প্রবন্ধটি লেখার সময় বেঁচে ছিলেন)]। সবার রায় নিয়ে সেটা মুকাম্মাল করা হল। সাদ সাহেব মেনে নিলেন না। এর কারণ কি? উনি কেন শুরা মেনে নেন না? উনি মেনে নিলে কি সমস্যা হবে। এই সমস্ত দ্বন্দ্বের কারণে
অনেক পুরনো সাথীগণ মারকায ছেড়ে চলে গেছেন। আর এদিকে মাওলানা সাদ সাহেব বলছেন সাহাবাগণ মদিনা থেকে চলে যাওয়া ইরতিদাদ সমতুল্য মনে করতেন তাই নিযামুদ্দিন থেকে কেউ যেও না (আবারো সেই একি ঘটনা, মদিনার সাথে নিযামুদ্দিনের তুলনা, সাহাবাদের সব কিছু টেনে তাবলীগে লাগানো)।
আমার কথা আপনি আমির হন আপত্তি নাই, কিন্তু তাবলিগের সব মুরুব্বিরা আপনাকে না মানলে আমি চুনা পুটি আপনাকে আমির কেমনে মানব। আগে আপনি সবার সাথে মাশওয়ারা করে আমির হন আপনাকে আমি মেনে নিব। আপনি নিজেই বলেছেন “আল্লাহকো দাওয়াত আওর দুয়া পাসান্দ হ্যায়, দাওয়া পাসান্দ নেহি” “আল্লাহ তাআলার দাওয়াত ও দুয়া পছন্দ, দাবি করা
পছন্দ না”। আপনি দাবি করেছেন কি করেন নি বা এমনি করেছেন না রাগের মাথায় করেছেন তা কথা না, IPB ( India Bangladesh Pakistan ) হল এই কাজের মুলধারা। এই তিন ধারা আজ বিভক্ত। আপনি তিন ধারার সাথে একমত হয়ে আমির হন মেনে নিব। আর যদি না হন তাহলে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন ২০১৫ সালের ঐ মুকাম্মালকৃত শুরার সাথে একমত পোষণ করে ফেলেছে, বাংলাদেশের উলামায়ে কিরাম শুরাদের
অধিকাংশ যেমন আপনার বিপক্ষে
উলামাদের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন আমি
তাঁদের সাথেই আছি। অনেকে বলেন এই
শুরার কন্সেপ্ট নতুন। আসলে হল আমিরের কন্সেপ্ট নতুন। ১৯৯৫ সাল থেকেই শুরার মাধ্যমে কাজ করে আসছে। এই শুরার ফয়সালা মাওলানা যাকারিয়্যা
রহমাতুল্লাহি আলাইহি কয়েকদিন যাবত
মদিনায় মোরাকাবার মাধ্যমে করেছিলেন।
এই গুলো হল আমার কথা। এ দিকগুলো বিবেচনা করে আমি আমার অবস্থান গ্রহণ
করেছি। আপনি আপনার অবস্থান গ্রহণ করুন।
#Toufiq_Hussain থেকে।
অফিস : ৪৪-ক, অতিশ দীপঙ্কর রোড, মুগদা, ঢাকা । সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএস ভবন, ১২০/এ মতিঝিল, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭৫৩-৫২৬৩৩৩ ই-মেইল : dainikkalerkhobor5@gmail.com
কারিগরি সহযোগিতায় ফ্লাস টেকনোলজি