সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পূর্বাহ্ন
এম আই ফারুক, কালের খবর : সাংবাদিকসহ সমাজের নানা স্তরের মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে অবশেষে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বরেণ্য সাংবাদিক ও সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। কয়েক দফা জানাজা শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
এর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বর্ষীয়ান এই সাংবাদিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সাংবাদিক, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, রাজনীতিবিদসহ সমাজের নানা স্তরের মানুষ।
গতকাল সকালে গোলাম সারওয়ারের কফিন নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল দৈনিক সমকাল কার্যালয়ে। সেখানে সহকর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সকাল ১১টায় মরদেহ নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও সমকাল পরিবারের যৌথ আয়োজনে নাগরিক শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে। সেখানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের পরে তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মান (গার্ড অব অনার) জানায় ঢাকা জেলা প্রশাসন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার প্রমুখ। এ ছাড়া শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানান জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান, নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান, কবি কামাল চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ইটিভির সিইও মনজুরুল আহসান বুলবুল, র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, সমাজকর্মী খুশী কবির প্রমুখ।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করেছেন আপসহীন কলমযোদ্ধা গোলাম সারওয়ার। মুক্তিযুদ্ধ কিংবা বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গে তিনি সব সময় ছিলেন আপসহীন ও অবিচল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলাম সারওয়ারের সরাসরি শিক্ষক ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকের আগে আজ ছাত্র চলে গেল, সত্যিই তা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। সারওয়ার আজীবন সৎ সাংবাদিকতা করে গেছে। অনেক সাংবাদিক তৈরি করে গেছে। সাংবাদিকতা জগতে তার নাম স্থায়ী হয়ে থাকবে। ’
পরিবারের পক্ষ থেকে বড় ছেলে গোলাম শাহরিয়ার রঞ্জু বলেন, ‘আমার বাবা সাংবাদিকতায় অত্যন্ত সিরিয়াস ছিলেন। নিজের কাজকে একদম ধর্মের মতো পালন করতেন। সারা জীবন মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের কথা বলেছেন তিনি। সেই আদর্শেই আমাদের বড় করেছেন। ’
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আরো শ্রদ্ধা নিবেদন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন।
দুপুর সাড়ে ১২টায় গোলাম সারওয়ারের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে। সেখানে ঢাকা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে পুলিশের একটি চৌকস দল তাঁর কফিন জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। এর আগে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাঁর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রেসসচিব ইহসানুল করিম ও উপপ্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন এই বরেণ্য সাংবাদিকের কফিনে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
দীর্ঘ পাঁচ দশকের আড্ডাস্থল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সঙ্গে গোলাম সারওয়ারের ছিল গভীর আত্মিক সম্পর্ক। প্রায় প্রতিদিন তিনি প্রেস ক্লাবে যেতেন। দুপুরে সেখানে আহার করতেন।
প্রেস ক্লাবেও গোলাম সারওয়ারকে শ্রদ্ধা জানাতে যায় নানা শ্রেণির মানুষ। ওই সময় বক্তব্য দেন ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, ইটিভির সিইও মনজুরুল আহসান বুলবুল, সমকালের প্রকাশক এ কে আজাদ, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, গোলাম সারওয়ারের বড় ছেলে গোলাম শাহরিয়ার রঞ্জন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমীন, বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল প্রমুখ।
প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে জানাজাও অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, সাংবাদিক সৈয়দ কামালউদ্দিন, শাহজাহান মিয়া, হাসান শাহরিয়ার, আবুল কালাম আজাদ, মতিউর রহমানসহ নানা বয়সের অসংখ্য সাংবাদিক।